চালাঘরে হরিজন শিশুদের পাঠশালা

ময়মনসিংহ, দেশের খবর

রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) | 2023-08-28 13:07:33

ছোট্ট চালাঘর, মেঝেতে বিছানো ত্রিপল। বই-খাতা নিয়ে পড়াশোনা করছে একদল শিশু। তাদের পড়াচ্ছেন কয়েকজন তরুণ-তরুণী। কচিকণ্ঠের পড়াশোনার আওয়াজ ধ্বনিত হচ্ছে চারপাশে।

বুধবার বিকালে গৌরীপুর পৌর শহরের হরিজন শিশুদের অস্থায়ী স্কুলের পাঠদানের চিত্র এটি। পাঠদান করছেন অনলাইনভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গৌরীপুর হেল্পলাইনের সদস্যরা।


স্কুল প্রাঙ্গণে কথা হয় সংগঠনের অ্যাডমিন ও মডারেটরদের সাথে। তাদেরই একজন এইচটি তোফাজ্জল হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদান ও গৌরীপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে ২০১৯ সালের শুরুতে যাত্রা শুরু করে গৌরীপুর হেল্পলাইন। একদিন সংগঠনের মাসিক সভায় বন্ধু সাদমান প্রস্তাব দেন ঝরে পড়া হরিজন শিশুদের পাঠাদান করানো হবে। ওর কথায় সায় দেয় অন্যরাও। এরপর নিজেরাই কিছু টাকা সংগ্রহ করে স্কুলশিক্ষার কার্যক্রম চালু করি।’

চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০ জন হরিজন শিশু নিয়ে যাত্রা শুরু হয় স্কুলশিক্ষা কার্যক্রমের। সপ্তাহের শুক্র ও বুধবার পাঠদান দেওয়া হয়। শিক্ষকতার দায়িত্ব পান হেল্পলাইনের অ্যাডমিন ও মডারেটররা। স্কুলের আসবাবপত্র, বেঞ্চ, টেবিল কিছু না থাকায় মেঝেতে ত্রিপল বিছিয়ে একটি ব্ল্যাকবোর্ডে চলে হরিজন শিক্ষার্থীদের পাঠদান। স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত করার জন্য বিনামূল্যে বিস্কুট, খাতা-কলম দেওয়া হয় হেল্পলাইনের পক্ষ থেকে। বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারহানা করিম সরকারি বইয়ের ব্যবস্থা করেছেন।

হেল্পলাইনের অ্যাডমিন মোস্তাকিম আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতা মোকাবিলা করে হরিজন শিশুদের পাঠদান করছি। কিন্তু নিজস্ব ঘর না থাকায় পাঠদানে সমস্যা হয়। সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা যদি একটি ঘর করে দেন তাহলে শিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল হবে।’

স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, হেল্পলাইনের স্কুলে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের বয়স ৫-১০ বছর। তাদের বেশিরভাগ বর্ণ বৈষমে্যর শিকার হয়ে স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। তাই এখানে পড়াশোনার সুযোগ হওয়ায় তারা আনন্দিত।

শিক্ষার্থী মুন্না বাঁশফোড় জানাল, ‘ঘোষপাড়া স্কুলে পড়তে গেলে সহপাঠীরা মেথর কইয়্যা গালি দিত। বেঞ্চে বইতে দিত না। তাই ইশকুলে যাওয়া ছাইড়া দিছিলাম। অহন এই ইশকুলে আইয়্যা নাম লিখা শিখছি।’

মুন্নার কথা শেষ না হতেই শিক্ষার্থী রুপা বাঁশফোড় বলল, ‘স্যার, আমি ছড়া শিখছি। শুনবেন?’ অনুমতির অপেক্ষা না করেই সুফিয়া কামাল রচিত ‘ইতল বিতল’ ছড়াটা আবৃত্তি করতে শুরু করল।

রুপার দিকে ইঙ্গিত করে সংগঠনের মডারেটর মালবিকা সুক্তি বলেন, ‘রুপাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় বেশ আগ্রহ আছে। কিন্তু আমরা ওদের অক্ষরজ্ঞান শেখাচ্ছি। ওদের এগিয়ে নিতে হলে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।’

ফেরার সময় হরিজন সম্প্রদায়ের সর্দার রঙিলা বাঁশফোড় বলেন, ‘হেল্পলাইন স্কুলে শিশুরা পড়াশোনা করতে পারায় আমরা খুশি। কিন্তু আমাদের জন্য আলাদা স্কুল কিংবা সরকারি স্কুলে পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করলে আমরা আরো খুশি হব।’

জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘হরিজন শিশুদের শিক্ষার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি শিশুকল্যাণ স্কুল প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর