লালপুর বৃষ্টিহীন, নষ্ট হচ্ছে ৭ হাজার হেক্টর জমির আমন

নাটোর, দেশের খবর

নাইমুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, নাটোর | 2023-08-10 22:50:03

দেশের সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাতের স্থান নাটোরের লালপুরে বৃষ্টি নেই প্রায় এক মাস। বৃষ্টির অভাবে তাই এবার কপাল পুড়েছে রোপা আমন চাষিদের।

চারা রোপণের সময় কিছুটা হলেও এখন নেই বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও। ফলে উপজেলার প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন চাষ হুমকির মুখে পড়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের জমি শুকিয়ে চৌচির হতে শুরু করেছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাজরা পোকা ও পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ। হাতেগোনা কয়েকজন কৃষক সম্পূরক সেচ দিলেও অধিকাংশ কৃষক সেচের অভাবে ফসলহানির আশঙ্কা করছেন। ফলে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ এবং লক্ষমাত্রা নিয়ে সংশয় রয়েছে ধান চাষিদের।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে লালপুর উপজেলায় পাঁচ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে সাত হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে।

সম্প্রতি উপজেলার চকনাজিরপুর, ওয়ালিয়া, মুরদাহবিল, দুয়াড়িয়া, দুরদুরিয়া, বরমহাটি, বড়ময়নাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে খাঁ খাঁ করছে আমনের মাঠ। চৌচির হয়ে গেছে ধানক্ষেত। কোনো কোনো জমির ধান বিবর্ণ হয়ে গেছে। ক্ষেতের কিছু অংশে ধান একেবারে চিটা হয়ে গেছে।

field

ধানচাষিরা এমন পরিস্থিতর জন্য মূলত প্রকৃতির বৈরী আচরণকেই দুষছেন। তাদের মতে, দেশের উষ্ণতম এ স্থানে প্রতি বছর বৃষ্টিপাত কম হলেও মোটামুটি ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন।

ওয়ালিয়া ইউনিয়নের ধানচাষি আশিকুর রহমান জানান, তিনি ঈদের আগে বৃষ্টির পানিতে প্রস্তুত জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছেন। এর পর আর বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ধানে মাজরাসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণ বেড়েছে।

মামুনুর রশীদ নামের তিলকপুর গ্রামের আরেক চাষি জানান, বৃষ্টির অভাবে সেচ দিয়েও তেমন উপকার হচ্ছে না। ধান ঘরে তোলার কোনো উপায় দেখছি না।

ছোটাময়না গ্রামের আকতারুজামান বলেন, ‘অনাবৃষ্টিতে সৃষ্ট তীব্র খরায় ধানের জমি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ধান বাঁচাতে বাধ্য হয়ে দুই দিন পর পর বিঘা প্রতি ৬০০ টাকায় সম্পূরক সেচ দিচ্ছি।’

হাবিবুর রহমান, সাদ্দাম হোসেনসহ স্থানীয় কৃষকরা জানান, তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টিতে ধান গাছের বৃদ্ধি হচ্ছে না। এ বছর মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় এমনিতেই ধান রোপণে দেরি হয়েছে। তার ওপর অনাবৃষ্টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বার্তটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘ভৌগলিক কারণে লালপুরে বৃষ্টিপাত হয় কম। চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে কিছু জমি শুকিয়ে গেছে। কৃষকদের সম্পূরক সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তবে অনাবৃষ্টি নিঃসন্দেহে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস করবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর