ঝোপ-ঝাড়ে দুষ্প্রাপ্য দেশি আনারস

গাইবান্ধা, দেশের খবর

তোফায়েল হোসেন জাকির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, গাইবান্ধা | 2023-08-22 12:14:20

এক সময়ে গাইবান্ধা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঝোপ-ঝাড় ও বসতবাড়ির আশপাশে হরহামেশাই পাওয়া যেত দেশি আনারস। এখন অবশ্য তা একেবারেই দুষ্প্রাপ্য। আগের মতো নজরে পড়ে না এসব আনারস।

জানা যায়, কয়েক দশক আগে গাইবান্ধার গ্রামাঞ্চলের ঝোঁপ-ঝাড় ও বসতবাড়ির আশপাশে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠত দেশি আনারস। তখন এ আনারসের কদর ছিল অনেক। সেই সময় আনারস নেই, এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া মুসকিল ছিল।

দেশি আনারস বিলুপ্তির কারণ সম্পর্কে প্রবীণ ব্যক্তি কলিম উদ্দিন বলেন, ‘আগে কৃষকদের ফসল উৎপাদনে সচেতনতার অভাবে আবাদযোগ্য জমি পতিত পড়ে থাকত। এসব পতিত জমিতে গজিয়ে উঠত ঝোপ-জঙ্গল। এসব জমিতে কোনোভাবে একটি আনারস গাছ জন্ম নিলে তা থেকেই শত শত আনারস গাছ হতো। এখন দেশের আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটেছে। ফসল উৎপাদনে এসেছে নানা ধরনের প্রযুক্তি। কৃষকদের মধ্যে বেড়েছে সচেতনতা। ফলে এখনকার মানুষ খুব বেশি জমি পতিত ফেলে রাখে না। তারা পরিকল্পনা করে লাভজনক ফসল উৎপাদন করে। তেমন চাহিদা না থাকায় দেশি আনারস চাষের প্রতি তাদের আগ্রহ নেই। ফলে ঝোপ-ঝাড়ের সঙ্গে দেশি আনারসও এখন তেমন দেখা যায় না।

দেশি আনারস গাছ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

এদিকে, প্রায় সব এলাকা থেকে দেশি আনারস উঠে গেলেও গাইবান্ধার ধাপেরহাট এলাকার বোয়ালীদহ গ্রামে মো. লেবু মিয়া নামের এক কৃষকের ঝোপ-জঙ্গলে এখনো স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার আনারস গাছ। যেন বাগানরূপে গাঢ় সবুজে পরিণত হয়েছে। যা লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

মো. লেবু মিয়া বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকেই আমাদের বাড়ির পাশের একটি জঙ্গলে আনারস গাছগুলো রয়েছে। যা থেকে বছরে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকার আনারস বিক্রি করা হয়। আগামী প্রজন্ম পর্যন্ত এসব আনারস থাকবে।’

মনিনুল ইসলাম নেহাজ নামের একজন ভেষজ চিকিৎসক (অবসরপ্রাপ্ত) বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাংগানিজ। যা মানবদেহের হাড়ের সুস্থতায় প্রয়োজনীয়। এছাড়া দেশি আনারসের ছাল গ্যাস্টিকের চিকিৎসায় প্রয়োজন। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পরিমিত পরিমাণ আনারস রাখলে হাড়ের সমস্যাজনিত যে কোনো রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

দেশি আনারস গাছ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম



গাইবান্ধার কৃষি কর্মকর্তা খাজানুর রহমান বলেন, ‘দেশি আনারসের রস কম ও একটু টক। আর উন্নত জাতের আনারস অনেক রসালো এবং সুস্বাদু। তাই এখন বাণিজ্যিকভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় উন্নত জাতের আনারস চাষ করা হচ্ছে। এর ফলে দেশি আনারসের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর