গ্রামগঞ্জে দেখা নেই গরু-মহিষ দিয়ে হাল চাষ

, দেশের খবর

মো. খাইরুল ইসলাম আকাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, বরগুনা | 2023-09-01 23:11:27

এক সময় ভোরে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙত কৃষকদের। সকালের খাবার খেয়েই কাক ডাকা ভোরে তারা লাঙল ও জোয়াল আর হালের গরু-মহিষ নিয়ে মাঠে বেরিয়ে পড়তেন। গুরু-মহিষের হালে জোয়াল আর লাঙল ঝুলিয়ে জমিতে চলতো চাষ। আবার মই দিয়ে জমি মাড়ানো হতো। কাজ শেষে আবারও বাড়ি ফেরা।

কিন্তু কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় বরগুনায় সেই হালের গরু-মহিষ এখন আর তেমন দেখা যায় না। অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চলে চাষাবাদ। এতে দিনমজুর কৃষকরা অনেকেই বেকার জীবন যাপন করছেন। ফলে অনেকেই ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

জেলার বিভিন্ন কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় বরগুনার গ্রামগঞ্জে প্রতিটি ঘরেই ছিল হালের গরুর-মহিষ। চাষের মৌসুমে এসব হালের গরু-মহিষ দিয়ে আয় হতো তাদের। গরু-মহিষের জন্য আলাদা তাজা ঘাস বরাদ্দ থাকতো।

বেতাগী উপজেলার একটি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাম বাংলার এক সময়ের ঐতিহ্য মহিষ দিয়ে হাল চাষ শেষে জমিতে মই দিচ্ছেন সেলিম বিশ্বাস নামে এক কৃষক। দিন শেষে তিনি ৬৬ শতাংশ জমি চাষ দিয়েছেন। যা ট্রাক্টর বা আধুনিক যন্ত্র দিয়ে চাষ করালে দুই ঘণ্টার ভেতরে হয়ে যেত। তবে ফসলের জন্য জমি উপযুক্ত করতে গরু-মহিষের হালের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন এই কৃষক। তাই তিনি তার মহিষ দিয়ে হাল চাষ করিয়েছেন।

সেলিম বিশ্বাস বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমি আমার বাব-দাদার ঐতিহ্য মহিষ দিয়ে চাষাবাদ করি। কারণ, মহিষ দিয়ে হাল চাষ করলে জমির কোনো ক্ষতি হয় না। বিজ বপণের জন্য ভালো হয়। খরচও কম হয়। যদিও সময় বেশি লাগে, তাও সমস্যা হয় না।’

আরেক কৃষক আনোয়ার হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ায় ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করালে বেশি টাকা দিতে হয়। তার চেয়ে গরু-মহিষের চাষ দেওয়াই অনেক ভালো। তাই আমি সব সময় গরু দিয়ে চাষাবাদ করি। এতে একদিকে খরচ কম হয়, অন্যদিকে জমির চাষ ভালো হয়। আর আমাদের পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রেখেছি।’

ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা মো. রাসু গাজী নামে এক কৃষক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমার গরু না থাকায় নিজেই ট্রাক্টর কিনে জমিতে চাষাবাদ করি। খরচ একটু বেশি হলেও কিছু করার নাই। কারণ ডিজিটাল দেশে মানুষ এখন আর কাজে থাকতে চায় না। শ্রম যারা দেয় তাদের তিন বেলা খাওয়ানোর পর ৭৫০ টাকা দিতে হয়। তাই গরু দিয়ে হাল চাষ করতে গেলে লাভবান হওয়া যায় না। তাই ট্রক্টর বেচে নিয়েছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর