প্রভাব বিস্তারের আগাম ‘রিহার্সাল’ রোহিঙ্গা মহাসমাবেশ?

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কক্সবাজার | 2023-08-31 11:20:55

গত ২৫ আগস্ট যে মহাসমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা তা নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়নি দাবি করা হলেও রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন প্রশাসনকে জানিয়েই সমাবেশ করেছেন তারা।

অন্যদিকে স্থানীয়দের ওপর প্রভাব বিস্তারের আগাম ‘রিহার্সাল’ হিসেবে রোহিঙ্গারা মহাসমাবেশ করেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। তবে পুলিশ বলছে, আগামীতে এ ধরনের অনুষ্ঠান অনুমোদনের ক্ষেত্রে আরও ভাববার বিষয় রয়েছে।

উখিয়ার কুতুপালং বা বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যোগাযোগের মাধ্যম ইজিবাইক। তাও আবার অপর্যাপ্ত, সীমিত। এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পের বাসিন্দাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে খুব কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়। প্রশ্ন হলো—এত সীমাবদ্ধতার পরও ২৫ আগস্ট মুহূর্তেই পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা কিভাবে এক জায়গায় সমবেত হলো?

আরও পড়ুন: ৫ দফা দাবিতে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ

স্থানীয়রা বলছেন, নবগঠিত ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’র নেতারা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্যাম্পে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তারা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারের মাধ্যমে মহা-সমাবেশের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। কোথাও কোথাও মসজিদ, স্কুল ও ডিস্ট্রিভিউশন সেন্টারের মাইক দিয়ে আহ্বান করা হয়েছিল মধুরছড়া ক্যাম্পে জড়ো হতে। প্রশিক্ষিত ওই তিন শতাধিক সদস্যকে দিয়ে যেকোন কর্মকাণ্ড ঘটানো যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

অন্যদিকে এনজিওগুলো রোহিঙ্গাদের মূল সহায়ক শক্তি। লাখ লাখ টাকা খরচ করে সমাবেশের জন্য প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, সাদা শার্ট আর গেন্জি তারাই সরবরাহ করেছে, এমন অভিযোগও রয়েছে।

আরও পড়ুন: মিয়ানমারের ওপর আস্থা রাখা বোকামি, সমাবেশে রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, স্থানীয়দের ওপর আগামী দিনে কী ধরনের প্রভাব বিস্তার করবে তা বোঝানোর জন্য এমন সমাবেশ করেছে তারা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের প্রশাসন তার অনুমতি দিয়েছিল। আগাম রিহার্সাল যেখানে সহজে করতে পেরেছে সেখানে তারা যেকোন দুর্ঘটনা ঘটাতেও পারে।

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বাংলাদেশের এনআইডি ছাড়া কারও সিমকার্ড পাওয়ার কথা নয়। কিভাবে তারা এই নম্বর পেলো এমন প্রশ্নও রয়েছে। এত বড় সমাবেশ করে কী বুঝাতে চাচ্ছে রোহিঙ্গারা, তা যদি এখনি উপলব্ধি করা না যায় তাহলে আগামী দিনে হয়তো বড় কিছু ঘটতে চলেছে। যা আমাদের প্রতিরোধ করতে হিমশিম খেতে হবে। তাই এখনি সতর্ক হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: ‘রোহিঙ্গাদের সমাবেশের খবর জানতো না কর্তৃপক্ষ’

‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’র চেয়ারম্যান মাস্টার মুহিব উল্লাহ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, গণহত্যা দিবসে গণজমায়েত করা হয়েছিল মিয়ানমারকে জানান দিতে। স্থানীয়দের ওপর যেন প্রভাব না পড়ে তাই ক্যাম্পের এত ভেতরে সমাবেশ করেছি। শুধু ঐক্যবদ্ধ থেকে নিজেদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের তিন শতাধিক কর্মী তৎপর থেকে সমাবেশের আয়োজন করেছে।

আরও পড়ুন: সমাবেশের অনুমতি ছিল, দাবি রোহিঙ্গা নেতাদের

রোহিঙ্গাদের এ সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, সমাবেশ এর আগেও আমরা করেছি। প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। অনুমতি দেওয়ার পরই আমরা এ সমাবেশের আয়োজন করেছি। এখন যদি কেউ অস্বীকার করে তাতে আমরা কী করতে পারি?

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, রোহিঙ্গাদের গণজমায়েত অহিংস ছিল। তবে আগামীতে এ ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর