রিফাত হত্যার ২ মাসেও গ্রেফতার হননি ৪ আসামি

বরগুনা, দেশের খবর

মো. খাইরুল ইসলাম আকাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, বরগুনা | 2023-08-27 04:26:27

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যার দুই মাস আজ (২৬ আগস্ট)। কিন্তু এতোদিনেও গ্রেফতার হননি হত্যায় সরাসরি জড়িত মুসা বন্ডসহ মামলার এজাহারে থাকা চার আসামি। আর ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে তাদের দেখা গেছে হত্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে। এদিকে এ মামলায় এখনও চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ।

গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজ গেট এলাকায় সন্ত্রাসী নয়ন বন্ড বাহিনী প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে। এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড নিহত হন বন্দুকযুদ্ধে। আর মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১৫ জনকে। যার মধ্যে রয়েছেন রিফাতের স্ত্রী ও রিফাত হত্যা মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। কিন্তু দুই মাস পার হলেও এখনও গ্রেফতার হননি মামলার এজাহারে থাকা বন্ড গ্রুপের সদস্য মুসা বন্ড, মুহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রায়হান ও রিফাত হাওলাদার।

এদিকে বরগুনার সতেচন মহল বলছে, তিনটি ধার্য তারিখেও রিফাত হত্যা মামলার চার্জশিট করতে পারেনি পুলিশ। আদালত পরবর্তী ধার্য তারিখ দিয়েছেন ৩ সেপ্টেম্বর। সে তারিখেও পুলিশ রির্পোট (চার্জশিট) দিতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। প্রথম দিকে মামলার অগ্রগতি ভালো থাকলেও শেষ পযর্ন্ত কি হয় বলা যায় না।

রিফাত হত্যায় যারা জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান ও এ হত্যার সুষ্ঠু বিচারের আশা করেন তারা।

গত ১৪ আগস্ট মামলার আসামিদের নিয়মিত হাজিরার দিন ছিল। সেই দিনই চার্জশিট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা পিছিয়ে গত ২২ আগস্ট দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিতে পারেনি পুলিশ। নতুন করে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পুলিশের প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। বরগুনার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে এ চার্জশিট দেবে পুলিশ।

রিফাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও জড়িত সন্দেহে ১৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা সবাই হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। আর প্রধান আসামি নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

নিহত রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, ‘রিফাত হত্যার পরে পুলিশ যেভাবে কাজ করেছে, এখন তা একেবারেই নেই। তাই বাকি আসামিরা ধরা পড়ছে না।’

বরগুনা সচেতন নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, অ্যাডিডাস কোম্পানির একটি স্কুল ব্যাগ কাধে ড্যামা গুলিশাখালী এলাকার সেন্টু চৌকিদারের ছেলে নাঈম বন্ড রিফাতকে কলেজ থেকে টেনে বের করছেন এবং রিফাতকে প্রথম আঘাতও করেন নাঈম। তিনিসহ রিফাত হত্যায় যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের অনেকেই এখনও রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন যে যা বলার চার্জশিট দেওয়ার পরে বলবেন।

এদিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে এক সপ্তাহের রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আগামী ২৮ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে কেস ডকেট নিয়ে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়েছে। তাছাড়া মিন্নির সংশ্লিষ্টতার বিষয় জানিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে পুলিশ সুপারকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন। মিন্নিকে কখন গ্রেফতার করা হয়েছে, আদালতে নেওয়া হয়েছে ও কোথায় কখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং পুলিশ সুপার কবে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তা সুস্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

গত ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল নেওয়ার পর তিনি মারা যায়। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর