আস্থাহীনতায় প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের অনীহা

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কক্সবাজার | 2023-08-22 00:26:48

মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে দুই দফা চেষ্টার পরও রোহিঙ্গারা তাদের ওপর আস্থা রাখতে রাজি নয়। তাই বার বার রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে দেওয়া শর্ত না মানলে তারা স্বদেশে ফিরবেন না বলে জানান নেতারা।

ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন বলছে, সম্প্রতি ৩ হাজার ৫৪০ রোহিঙ্গার তালিকা পাঠায় মিয়ানমার। এ তালিকা ধরে দ্বিতীয়বারের মত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার চালু করতে সব প্রস্তিুত নেয় বাংলাদেশ সরকার। গত ২২ আগস্ট ছিল সেই দিন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের শর্তের মুখে তা হয়ে ওঠেনি।

মিয়ানমারের পাঠানো তালিকার রোহিঙ্গা রয়েছেন টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের ২৬ নম্বর ক্যাম্পে। এখনো রোহিঙ্গাদের মতামত নিচ্ছেন ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা। এসব প্রতিনিধিকে ‘শর্ত না মানলে যাবেন না’ বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াছ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, গত বৈঠকে আমাদের সঙ্গে আরও আলোচনা করার কথা দেন মিয়ানমার প্রতিনিধিরা। কিন্তু তারা সে কথা না রেখে হঠাৎ প্রত্যাবাসনের ঘোষণা দেন। এটি তাদের নতুন চক্রান্ত। তাই আমরা মিয়ানমারের ওপর আস্থা রাখতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, নাগরিক অধিকার, আমরা নিরাপত্তাসহ যেসব শর্ত দিয়েছি, সেগুলো না মানলে কখনো মিয়ানমারে ফিরব না। মিয়ানমার আমাদের চিহ্নিত করেছে, ঠিক আছে। কিন্তু শর্তগুলো না মানলে ফেরা অসম্ভব বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছি।

শালবন ক্যাম্পের ডি-২’র বাসিন্দা আবু ছিদ্দিক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আমরা সেই পুরনো দাবিগুলো তুলে ধরেছি। নাগরিত্ব ও মিয়ানমারের যে ১৩০ জাতি রয়েছে, তাদের মধ্যেও আমরা নেই। আমাদের দাবিগুলো পুরণ হলে ফিরব।

আরেক রোহিঙ্গা মো. সলিম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, দাবি না মানলে ফিরে যাওয়া কঠিন হবে। কারণ নিরাপত্তা ও নাগরিত্ব ছাড়া সেখানে গেলে আবার সহিংস হতে পারে মিয়ানমার। তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রত্যাবাসনের ঘোষণা দিয়েছে। এটা তাদের একটা চক্রান্ত।

কয়েকজন রোহিঙ্গা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, রোহিঙ্গারা যদি স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হয়, তাহলে আমরা চূড়ান্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করব। তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছুই করব না আমরা। তাই তাদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথমবার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু রোহিঙ্গাদের শর্তের মুখে তা আর হয়ে ওঠেনি। পরে গত ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের সব প্রস্তুতি শেষ করে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু এবারও রোহিঙ্গাদের শর্তের মুখে আটকে যায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।

জাতিগত নিধন ও গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, নির্যাতন ও যৌন নিপীড়ন শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি শিবিরে এখন ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এ সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর