নকশার অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা কান্তজিউ মন্দির

ঠাকুরগাঁও, দেশের খবর

নাহিদ রেজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঠাকুরগাঁও | 2023-09-01 03:26:58

দিনাজপুর থেকে ফিরে: কান্তজিউ মন্দির। অনেকের মুখেই শুনেছি এই মন্দিরটির নাম। ইচ্ছে ছিল একদিন এই মন্দিরে যাব। অবশেষে ১৯ আগস্ট দিনাজপুর থেকে কাজ শেষে ঠাকুরগাঁওয়ে আসার পথে মোটরসাইকেল নিয়ে চলে গেলাম সেই মন্দিরে।

দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে ও কাহারোল উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে ঢেপা নদীর পাশে অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী ২৬৭ বছরের পুরনো কান্তজিউ মন্দিরটি।

মন্দিরে প্রবেশ করতেই ভেতরে দেখা গেল বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। একটু কাছে যেতেই চোখে পড়ল মন্দিরের দেয়ালে হাতে তৈরি নকশার অপরূপ সৌন্দর্য। যা দেখে মন ভরে যাবে সবার। এরপর মন্দিরটি সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেড়ে গেল আরও।

মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় তার শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়। পরে তার পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন।

শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। পরবর্তীতে মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের ব্যাপক সংস্কার করেন। তবে মন্দিরের চূড়াগুলো আর সংস্কার করা হয়নি।

মন্দিরের বাইরের দেয়াল জুড়ে পোড়ামাটির ফলকে লেখা রয়েছে রামায়ণ, মহাভারত এবং বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। পুরো মন্দিরে প্রায় ১৫ হাজারের মতো টেরাকোটা টালি রয়েছে।

মন্দিরের চারদিকের সবগুলো খিলান দিয়েই ভেতরের দেবমূর্তি দেখা যায়। মন্দির প্রাঙ্গণ আয়তাকার হলেও পাথরের ভিত্তির উপরে দাঁড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। নিচতলার সব প্রবেশ পথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। দুটো ইটের স্তম্ভ দিয়ে খিলানগুলো আলাদা করা হয়েছে। স্তম্ভ দুটো খুবই সুন্দর এবং সমৃদ্ধ অলংকরণযুক্ত।

মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। মন্দিরের নিচতলায় ২১টি এবং দ্বিতীয় তলায় ২৭টি দরজা-খিলান রয়েছে। তবে তৃতীয় তলায় রয়েছে মাত্র ৩টি করে।

পঞ্চগড় জেলা থেকে পরিবারসহ মন্দিরটি দেখতে এসেছেন আরিফ হোসেন। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই শুনে আসছি এই মন্দিরটির কথা। তাই সময় করে পরিবার নিয়ে মন্দিরটি দেখতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে। মন্দিরটি দেখতে অনেক সুন্দর। এখানের পরিবেশও অনেক ভালো।’

ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে জাহিদ, বাপ্পি, মুন্নাসহ আরও কয়েকজন মন্দিরে ঘুরতে এসেছেন। তারা বলেন, ‘মন্দিরটি অনেক সুন্দর। বিশেষ করে দেয়ালে আঁকা নকশাগুলো। আবার এখানে ঘুরতে আসব।’

কান্তজিউ মন্দিরের হিসাবরক্ষক শ্রী আপন চন্দ্র রায় বার্তাটোয়েন্টিফোরকে জানান, এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত পূজা করতে আসেন। প্রতিদিন তিনবার পূজা করা হয়। এছাড়া অন্য ধর্মের মানুষরাও মন্দিরটি ঘুরে দেখার জন্য আসেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর