‘আমার মেয়ে বেঁচে ফিরলো না’

কুষ্টিয়া, দেশের খবর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কুষ্টিয়া | 2023-09-01 02:29:04

‘আমার মেয়ের ফুসফুসে পানি জমেছিলো। ঢাকাতে অনেক ডাক্তার দেখিয়ে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও কোন লাভ হয়নি। ঈদের পর কলকাতা গিয়েছিল চিকিৎসার জন্য। আজ তার ফেরার কথা ছিলো কিন্তু আমার মেয়ে বেঁচে ফিরলো না। তার মরদেহ আনতে হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সে করে। আমার আদরের মানিক বুক খালি করে চলে গেল। ’

মেয়ের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন, কলকাতায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ফারজানা ইসলাম তানিয়ার বাবা মুন্সি আমিনুল ইসলাম।

রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার চাঁদটে তার গ্রামের  বাড়িতে গিয়ে কথা হয় মেয়ে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান বাবা মুন্সি আমিনুল ইসলামের সঙ্গে।

দুপুর একটায় তানিয়ার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে ঘিরে বাবা-মার কান্নায় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতরণা হয়।

মুন্সি আমিনুল ইসলাম অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। দুই মেয়েসহ পরিবার নিয়ে রাজধানীর লালমাটিয়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। ফারজানা ইসলাম তানিয়া সিটি ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে রাজধানীর ধানমণ্ডি শাখায় কর্মরত ছিলেন। বাবা মায়ের আদরের দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছিলেন ফারজানা ইসলাম তানিয়া। আর ছোটবোন তামান্না বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ অধ্যয়নরত।

আরও পড়ুন:সোহাগ ফিরলেন তবে নিথর দেহে

কলকাতায় নিহত ২ বাংলাদেশির লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স রওনা দেবে রাত ২টায়

এরআগে রোববার (১৮ আগস্ট) সকাল ৯টায় ভারতের পেট্রাপোল ও বাংলাদেশের বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ গ্রহণ করেন চাচাতো ভাই আবু ওবায়দা শাফিন। এরপর গ্রামে আনা হলে বাদ জোহর চাঁদট ঈদগাহ ও গোরস্থানে নামাজে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।

নিহত তানিয়ার চাচাতো ভাই রাকিব বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ফারজানা ইসলাম তানিয়া পাঁচ বছর ধরে সিটি ব্যাংকে চাকরি করছেন। সম্প্রতি তিনি এমবিএ ফাইনাল পরীক্ষা অংশ নিয়েছেন। তার এই অকাল মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েছে গোটা পরিবার।

নিহতের চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আকতার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বাবা মা ও একমাত্র ছোট বোনকে নিয়ে ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়ি চাঁদটে আসেন ফারজানা ইসলাম তানিয়া। ঈদের একদিন পর বুধবার সকালে চিকিৎসার জন্য কলকাতা যায়। শুক্রবার গভীর রাতে খাবার খেতে যাওয়ার আগে পরিবারের সদস্যদের সাথে মোবাইলে তিনি কথাও বলেন। এর কিছু সময় পর খাবার খেয়ে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

তিনি আরও জানান, রোববার খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স যোগে বেনাপোল থেকে সকালে তানিয়ার লাশ নিয়ে রওনা হয়ে দুপুরের দিকে চাঁদট গ্রামে এসে পৌঁছায়। পরে পৌনে তিনটার দিকে চাঁদট ঈদগাহ ও গোরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

প্রসঙ্গত, ১৬ আগস্ট ফারজানা ইসলাম তানিয়া, মাঈনুল ও তাদের এক সহকর্মী শফিউল্লাহসহ তারা তিনজন কলকাতার শেক্সপিয়র সরণিতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সিএনজির জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

এ সময় দুই দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসা দুটি প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে একটি প্রাইভেট কার উল্টে তাদের গায়ের ওপর এসে পড়ে। এ সময় গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন ফারজানা, মাঈনুল। আহত হন অপরজন শফিউল্লাহ।

আরও পড়ুন:কলকাতায় গাড়িচাপায় ২ বাংলাদেশির মৃত্যু, ঘাতক গ্রেফতার

এ সম্পর্কিত আরও খবর