আদিতমারীতে শিক্ষকদের সম্মানী থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

লালমনিরহাট, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, লালমনিরহাট | 2023-08-22 07:40:14

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্পের শিক্ষকদের সম্মানী থেকে এক তৃতীয়াংশ টাকা ঘুষ হিসেবে কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো।

রোববার (৪ আগস্ট) দিনভর উপজেলা পরিষদের হলরুমে শিক্ষকদের সম্মানীর জামানতের ৫০ শতাংশ বা ৩ হাজার ২৩০ টাকা প্রদান করা হয়। এ সময় সুপারভাইজাররা শিক্ষক প্রতি এক হাজার টাকা করে কেটে নেন। তারই প্রতিবাদে বিকেলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা।

শিক্ষকরা জানান, লালমনিরহাটের আদিতমারী ও হাতীবান্ধা উপজেলায় তিনশত করে মোট ৬০০ মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্প চালু করে সরকার। প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০ জন পুরুষ ও ৩০ জন নারীকে শিক্ষার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়। এসব কেন্দ্রে একজন পুরুষ ও একজন নারী শিক্ষককে মাসিক ২ হাজার ৪০০ টাকা সম্মানীতে নিয়োগ দেওয়া হয়। সুপারভাইজার ও প্রোগ্রাম অফিসারও নিয়োগ দেওয়া হয়। শিক্ষা উপকরণ ও কেন্দ্রের ব্যায় নির্বাহ করতে এনজিও বরাদ্দ দেয় সরকার।

তারা আরও জানান, প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলে মূল্যায়নের নামে আদিতমারী উপজেলার ৬০০ জন শিক্ষকের কাছ থেকে জনপ্রতি এক হাজার টাকা আদায় করেন সংশ্লিষ্ট সুপারভাইজাররা। যার অংশ প্রোগ্রাম অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের পকেটে গেছে। টাকা না দিলে মূল্যায়ন পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখিয়ে শিক্ষকদের সম্মানীর জামানতের অর্থ বাতিলের হুমকি দেন সুপারভাইজাররা। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা এক হাজার টাকার বিনিময়ে মূল্যায়ন ফরম নেন। ফলে সরকারের এ প্রকল্পটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়াও শিক্ষকদের সম্মানীর ৫০ শতাংশ জামানতে অর্থ বিতরণেও নেওয়া হয় শিক্ষক প্রতি এক হাজার টাকা। এ টাকা না দিলে সম্মানি না দেওয়ার হুমকি দেয়া হয়। ফলে প্রথম দিকে বাধ্য হয়ে অনেকে ঘুষ দিলেও দুপুরে ফুসে ওঠেন শিক্ষকরা। তারা ঘুষ বন্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ইউএনও আসাদুজ্জামানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অবশেষে ইউএনও গিয়ে ঘুষ নেওয়া বন্ধ করে দেন এবং ইতোপূর্বে যারা ঘুষ দিয়েছেন তাদের ওই অর্থ ফেরত দিতে বলেন। অন্যথায় সুপারভাইজারদের সম্মানী না দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের শিক্ষক দিপ্তী রানী ও বিথি রানী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, আমাদের প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়। পরে সম্মানীর টাকা তুলতে গেলে সুপারভাইজার শফিকুল ইসলাম ও রাজু আহমেদ সব শিক্ষকের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে কেটে রাখেন।’

ভেলাবাড়ির শিক্ষক পবিত্র কুমার ও মহিষখোচার শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘প্রকাশ্যে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু তা না করে শিক্ষক প্রতি এক হাজার টাকা নিয়ে একটি মূল্যায়ন ফরম দিয়েছেন সুপারভাইজাররা। এটা না দিলে অকৃতকার্য দেখিয়ে শিক্ষকদের সম্মানীর জামানত অংশ বাতিলের হুমকি দেন। অনেকটা বাধ্য হয়েই শিক্ষকরা টাকা দিয়েছেন।‘

আদিতমারী উপজেলার প্রোগ্রাম অফিসার শফিক হাসান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘হলরুমে শিক্ষকদের সম্মানী দেওয়া হচ্ছে। হলরুমের বাইরে কেউ টাকা নিলে সে দায়ভার আমার না।’

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর