মেঘনার ভাঙনে তীব্রতা বেড়েছে

লক্ষ্মীপুর, দেশের খবর

হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, লক্ষ্মীপুর | 2023-08-26 01:17:45

লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীর ভাঙন তীব্র হয়ে উঠেছে। প্রতি মুহূর্তেই ভাঙছে নদীর তীরের কোন না কোন অংশ। শীঘ্রই তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা না গেলে বিস্তীর্ণ জনপদ তলিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে ভাঙন ঠেকাতে জরুরী ভিত্তিতে কমলনগর উপজেলার লুধূয়া মাছঘাট এলাকায় নদীতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। তবে মেঘনার গভীরতা ও তীব্র স্রোতে সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

নদীর স্রোতে টিকছে না বালুর ব্যাগ

 

স্থানীয়রা জানিয়েছে, কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের লুধূয়া মাছঘাটের দক্ষিণে ও উত্তরে ২০০ মিটার করে মোট ৪০০ মিটার এলাকায় বালু ভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। উত্তর দিকে কাজ শেষ না হতেই মেঘনার স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে বালু ভর্তি জিওব্যাগ। গত কয়েকদিন থেকে দক্ষিণ দিকের কাজ শুরু হয়েছে। তবে নদীর স্রোতের সঙ্গে এই বালুর বাঁধ কতদূর টিকে থাকবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ছাড়া ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মাছ ঘাটের পাশেই একটি স্কুল, মসজিদ ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। বাঁধ না হলে নদীর তীব্র ভাঙনে অচিরেই বিলীন হয়ে যেতে পারে এইসব প্রতিষ্ঠানগুলো।

ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে

 

এদিকে নদীতে ভাঙন দেখা দিলেই তাৎক্ষণিক প্রতিরোধে কাজ করা হবে বলে সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান স্থানীয়দের আশ্বাস দিয়েছে। সেই লক্ষে লুধূয়া মাছঘাট মেঘনা এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। বর্ষা শেষে ১৬ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

জেলা পানি উন্নয়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভাঙন ঠেকাতে কমলনগরের লুধূয়া মাছঘাটে নদীর ৪০০ মিটার এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে স্থানীয় ঠিকাদারদের দিয়ে এ কাজ করানো হচ্ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কমিটির লোকজন কাজটি তদারকি করছেন।

বাঁধ নির্মাণ না করলে বিলীন হয়ে যেতে পারে পুরো এলাকা  

 

চর ফলকন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার জানান, তিনি ওই কাজ নিয়ে গঠিত কমিটির সদস্য। কাজের গুণগতমান ভালো হলেও মেঘনার করাল গ্রাসে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ তলিয়ে যাচ্ছে। এখানে মেঘনার গভীরতা বেশি। এতে প্রবল স্রোতের কারণে সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করা না গেলে পুরো এলাকা নদী গর্ভে হারিয়ে যাবে।

কোনো বাঁধও ঠেকাতে পারছে না ভাঙন

 

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, বর্ষার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্ষা শেষে নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ হবে। সে লক্ষ্যেই আমাদের কার্যক্রম চলছে।

২৭ বছর ধরে অব্যাহত মেঘনার নদী ভাঙন

 

প্রসঙ্গত, প্রায় ২৭ বছর ধরে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদী ভাঙছে। এরমধ্যে রামগতি ও কমলনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন নদীগর্ভে। এতে বিলীন হয়ে গেছে ৩১টি বড় হাট-বাজার, ৩৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৩০টি সাইক্লোন শেল্টার, ৫২টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার, ৪০০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক, ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। ভাঙনে তলিয়ে গেছে ৫০ হাজার একর ফসলি জমি ও ৪৫ হাজার ঘরবাড়িসহ কয়েক হাজার কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর