সাপের কামড়ের প্রতিষেধক দিতে টাকা দাবি: শিশুর মৃত্যু

পাবনা, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, পাবনা | 2023-08-24 22:43:45

পাবনার ঈশ্বরদীতে শিশু শাহজালাল ইসলাম (৫) বিষধর সাপের কামড়ে মারা গেছে। গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে প্রতিষেধক নিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। বাবা মোস্তফা ইসলাম টাকা দিতে ব্যর্থ হলে কয়েক ঘণ্টা পর শিশুটি বিষক্রিয়ায় মারা যায়।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় গুরুতর অবস্থায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে শিশু শাহজালাল বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।

সূত্রে জানা যায়, শিশু সন্তানকে বাঁচাতে তার বাবা-মা ঈশ্বরদী উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে বিষের প্রতিষেধক না থাকায় চিকিৎসকেরা শেষ ভরসা হিসেবে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

মৃত শাহজালালের বাবা টিউবওয়েল মিস্ত্রি মোস্তফা ইসলাম বলেন, 'ঈশ্বরদী আলহাজ্ব মোড় এলাকায় বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিত্যক্ত জায়গায় পাতার ছাউনি (ঝুপড়ি ঘর) তুলে থাকি। বিকেলে শিশু শাহজালাল বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় বিষধর সর্প (কিংগোখরা) শিশুটিকে কামড় দেয়। বিষের ব্যথায় শিশুটি কান্নাকাটি শুরু করলে, ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখতে পায় বিষধর সাপ কামড় দিয়ে বিছানার উপর পায়চারি করছে। এ অবস্থায় দ্রুত শিশু সন্তানকে নিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়।'

শিশুটির মা রিতা খাতুন বলেন, 'আমরা গরীব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। ছেলেটাকে বাঁচানোর জন্য হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তারদের খুব কাকুতি মিনতি করেছি। কিন্তু ছেলেটারে কোন চিকিৎসা করে নাই। আমার সঙ্গে পৌর সভার কাউন্সিলর সাঈদ হোসেন ছিলেন। ডাক্তাররা বিষ ধ্বংসের ইনজেকশন দেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা চেয়েছিল। কিন্তু টাকা দিতে পারিনি। হাসপাতালে ডাক্তাররা আমার ছেলেটাকে ভর্তিও করেনি। প্রায় দু ঘণ্টা পর বিনা চিকিৎসায় শিশুটি মারা গেছে।'

এদিকে ঈশ্বরদী পৌরসভার কাউন্সিলর সাঈদ হোসেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের টাকা দাবির বিষয়টি স্বীকার করেছেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে। 

এ ব্যাপারে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক রঞ্জন দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'হাসপাতালে নিয়ে আসার পর সাপের কামড়ের শিকার এক শিশু মারা গেছে এমন কথা শুনেছি।'

সাপের প্রতিষেধক নিতে টাকা দাবি করেছেন জরুরি বিভাগের ডাক্তার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'হাসপাতালে সাপের বিষ ধ্বংসের প্রতিষেধক নেই। রোগীর প্রয়োজনে স্বজনেরা টাকা দিয়ে বাইরে থেকে কিনে নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন।' 

ডা. রঞ্জনের দাবি, হাসপাতালের বহিরাগত কেউ হয়তো টাকা দাবি করে চিকিৎসার কথা বলতে পারেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন হাসপাতালের এমন কেউ টাকা দাবি করেননি। যদি কোন চিকিৎসক সাপের বিষ ধ্বংসের প্রতিষেধক দেওয়ার নামে টাকা দাবি করে থাকেন, তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন সহকারী পরিচালক রঞ্জন দত্ত।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, চিকিৎসকের অবহেলা, ভর্তি না করানো এবং সাপের বিষ ধ্বংসের প্রতিষেধকের ব্যবস্থা না করায় শিশুটির করুণ মৃত্যু হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর