ত্রাণের চাইতে গাইবান্ধার মানুষের নজর বেশি বাঁধের দিকে

গাইবান্ধা, দেশের খবর

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-20 04:13:31

ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) থেকেঃ ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা, যমুনা, ঘাঘট, বাঙালি নদীর জেলা গাইবান্ধা। দিনভর এই জেলার বিভিন্ন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুরে মনে হয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ যতটা না ত্রাণ চায়, তার চেয়ে বেশি প্রত্যাশা দ্রুত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতের।

শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকালে দেখা যায়, গাইবান্ধা জেলা শহরেও ঢুকে গেছে বন্যার পানি। জেলা জজের বাসা থেকে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনার চারপাশ জলমগ্ন। স্থানীয়রা বলছেন, বন্যা যে আসবে, সেটি তারা জানতেন। কিন্তু এভাবে বানের জল যে শহর প্লাবিত করবে, তা তাদের ভাবনাতেও আসেনি।

শহরতলীর বাসিন্দা আশরাফ হোসেন ক্ষোভের সাথে জানান, বাঁধগুলো যে নাজুক, এটা মাথায় রাখেনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তারা। জেলা শহর থেকে ফুলছড়ি, সর্বত্রই থৈ থৈ পানি।

বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান/ ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

নদীর পাড়ের মানুষদের কাছে বন্যা প্রতি বছরের নিয়তি। নিজেরাই সময়মতো আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন। মজুদ রেখেছিলেন আপদকালীন খাদ্যশস্য। বলছিলেন উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খাটিয়া বাড়ি গ্রামের মরিচা বেগম সহ বেশকিছু আশ্রিত বানভাসী।

ত্রাণের জন্য তেমন হাহাকারও নেই এখানকার দুর্গত মানুষদের। বিষয়টি এমন, সরকারি অথবা মানবিক ত্রাণ সহায়তা পেলে ভালো, না পেলেও আফসোস নেই। দিন চলে যাবে।

গাইবান্ধার এই বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। সঙ্গে ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়া, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব মো: শাহ্ কামাল, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী সহ প্রশাসনের ঊদ্ধর্তন কর্মকর্তারা।

ত্রাণ নিয়ে বাড়তি হৈচৈ বা ত্রাণের জন্য হামলে পড়া- এমন দৃৃশ্য কল্পনাও করে না এ অঞ্চলের মানুষ। কেন? দুর্যোগ সহনশীলতা। দুর্যোগে নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। যে কারণে ত্রাণ নিয়ে বাড়তি হাহাকার নেই এখানে- বলছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু হানিফ।

ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্যের সত্যতা মিলল, জেলা শহরের মাঠে। যেখানে হেলিকপ্টার নেমেছে, সেই আকাশযান দেখার জন্য জড়ো হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বাড়ির ছাদে, মাঠে বসে বা দাঁড়িয়ে উপভোগ করছিলেন হেলিকপ্টারের অবতরণ আর উড্ডয়ন।

সমাবেত এই মানুষদের সংখ্যা নি:সন্দেহে কয়েক গুণ বেশি ছিল ত্রাণ প্রত্যাশী বানভাসী মানুষদের তুলনায়। যা প্রমাণ করে এই অঞ্চলের মানুষদের সক্ষমতা। তবে ত্রাণের চাইতে হেলিকপ্টার দর্শনেই কি আগ্রহ বেশি এই জনপদের বানভাসী মানুষদের? বলতে পারেন তেমনই। গত তিনদিন ধরে এখানে কাজ করছি। এ অঞ্চলের মানুষরা আসলে ত্রাণ চায় না, চায় বাঁধ মেরামত এবং সেটা হওয়া চাই টেকসই- বলছিলেন ঢাকার একজন গণমাধ্যম কর্মী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর