সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বিপদসীমার ৯৯ সে.মি. ওপরে!

সিরাজগঞ্জ, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, সিরাজগঞ্জ | 2023-08-10 16:20:38

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকাল থেকে সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুপুর থেকে কাজিপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১৮ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে পানি বাড়ছে প্রতিদিনই। গত আট দিনে সিরাজগঞ্জ জেলার ৩৬টি ইউনিয়নের ২৭৭ গ্রাম ও দুই টি পৌরসভার বন্যাকবলিত হয়েছে। পানিবন্দী রয়েছে অন্তত আড়াই লাখ মানুষ। সুপেয় পানি, খাবার আর ত্রাণের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। বেশিরভাগ জায়গায় তলিয়ে গেছে টিউবওয়েল, এতে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন বানভাসিরা। পানিতে নিমজ্জিত থাকায় অনেকেরই শরীরে ঘা দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু তা নিতান্তই অপ্রতুল হওয়ায় অধিকাংশ বানভাসি তা পাচ্ছেন না।

সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর, বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে ৩৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই পেয়েছেন প্রায় সাড়ে ১১ হাজার বন্যার্ত মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ৫৫ হাজার ৭২৪টি পরিবার। এদের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৯৫৯টি। এক হাজার ৩৪৭টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ এবং ২৭ হাজার ৬৩৩টি বাড়িঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ১৬৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে আরও ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সিরাজগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে গেছে। স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সেগুলো বিতরণ কার্যক্রম চলছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত ৩৫৩.৩ মেট্রিক টন চাল, ৫ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মজুদ রয়েছে ৩৪৬.৭ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ টাকা। আরও ৫ লাখ টাকা, ৫০০ মেট্টিক টন চাল ও চার হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ আনার প্রক্রিয়া চলছে। কোনো বন্যার্ত মানুষ যেন বাদ না যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) হাবিবুল হক জানান, জেলার প্রায় সাত হাজার ৫৪১ হেক্টর জমির পাট, রোপা আমন, আউশ ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্টে যমুনার পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১৪.৩৫ মিটার, যা বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপরে। গত ২৪ ঘন্টায় ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে কাজিপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এদিন পানি বৃদ্ধির অনেকটা কমেছে। শুক্রবার সকালে পানি বাড়লেও বিকেল থেকে কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি: আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী

এ সম্পর্কিত আরও খবর