আর্থিক অনিয়মে কুষ্টিয়ার ডিসিকে শোকজ

কুষ্টিয়া, দেশের খবর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কুষ্টিয়া | 2023-08-30 18:17:44

পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ আর্থিক অনিয়ম, অদক্ষতা ও বরাদ্দকৃত অর্থ নয়-ছয়ের অভিযোগে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেনকে শোকজ করেছে। সেখানে কড়া ভাষায় আর্থিক অনিয়মের বিষয়টিও জানতে চাওয়া হয়েছে। 

সম্প্রতি ইকো পার্কের উন্নয়নে পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত ৯০ লাখ টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগ ওঠে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেনের বিরুদ্ধে। এসব আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করছে বিভাগীয় কমিশনার অফিস। গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন চিঠির জবাবও দিয়েছেন বলে জানা যায়।

গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) কুষ্টিয়া এসে সরেজমিনে পার্কের কাজসহ বিষয়টি তদন্ত করেছেন খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নিশ্চিন্ত কুমার পোদ্দার।

খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তদন্তে আসেন

 

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, পর্যটনের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে সাবেক জেলা প্রশাসক জহির রায়হান একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। সেই মোতাবেক মন্ত্রণালয় থেকে ৯০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দিয়ে তিনটি ইকো পার্কের উন্নয়নের জন্য প্রথমে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এরপর বদলি হয়ে যান জেলা প্রশাসক মোঃ জহির রায়হান। সেখানে তার স্থলে যোগ দেন মোঃ আসলাম হোসেন। তিনি ইকো পার্কের উন্নয়নের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করে টেন্ডার আহ্বানসহ কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেন।

অন্যদিকে স্থানীয়দের সহায়তায় নির্মাণ করা কুমারখালীর পৌরসভার ইকোপার্কটি উন্নয়নের লক্ষ্যে পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০ লাখ টাকার লে-আউট প্রাক্কলনসহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একটি প্রস্তাবনা প্রেরণের অনুরোধ করেন। অথচ সেই ইকোপার্ক উন্নয়নের কোন অর্থই বরাদ্দ পায়নি তারা।

পর্যটন মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থের অনিয়ম হয়েছে কি না তার তদন্ত চলছে  

 

কুমারখালী পৌরসভার কাউন্সিলর এসএম রফিক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, গতবছরে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া এই ইকোপার্ক পরিদর্শনে আসলে তাকে আমরা অনুদানের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তিনি পর্যটন মন্ত্রণালয়কে ২০ লাখ টাকার দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। অথচ এ পর্যন্ত সরকারি কোন বরাদ্দ পায়নি।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। প্রথমে ৯০ লাখ টাকা কয়েকটি ইকো পার্কের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি মহোদয় মন্ত্রণালয়ের চিঠি দিয়ে এই অর্থ কুঠিবাড়ির উন্নয়নের অনুরোধ করেন। পরে মন্ত্রণালয় থেকে শুধুমাত্র কুঠিবাড়ির উন্নয়নের নির্দেশ দেয়া হয়। 

একইসঙ্গে নতুন ইকো পার্কের কাজ ঠিকমতো চলছে কিনা দেখতে আসেন 

 

তিনি আরও বলেন, অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এর আগেও মন্ত্রণালয়ের দু'জন যুগ্ম সচিব বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেছেন। তারা আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। অনিয়মের অভিযোগ ওঠার কারণে মন্ত্রণালয় থেকে কাজ শুরুর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে না।

এদিকে, কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের গড়াই নদীর ধারে বালুর চরে একটি ইকো পার্কের উন্নয়নের কাজ চলছে। সেখানে সড়ক নির্মাণ, বেঞ্চ ও ছাতা নির্মাণের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে। কাজ শেষে ঠিকাদার চূড়ান্ত বিল নেয়ার জন্য চেষ্টা করছেন।

কুমারখালী কুঠিবাড়ির কস্টোডিয়ান মোখলেচুর রহমান বলেন, আমি টেন্ডার কমিটির সদস্য। তবে টেন্ডারের বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। খুলনা থেকে তদন্ত টিম এসেছিল। সেখানে আমার বক্তব্য জানিয়েছি।

তদন্তের বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান  নিশ্চিন্ত কুমার পোদ্দার

 

তদন্ত কমিটির প্রধান নিশ্চিন্ত কুমার পোদ্দার বলেন, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থের অনিয়ম হয়েছে কি না তা তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রয়োজনে পরে জানানো হবে।

কুষ্টিয়া ৪ আসনের সাংসদ সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, কুঠিবাড়ির উন্নয়নের জন্য আমি একটি ডিও লেটার দিয়েছিলাম। অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে কাজ শুরু হয়েছে কিনা জানিনা। আমাকে কেউ এ বিষয়ে অবহিত করেনি। কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে মন্ত্রণালয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। তবে কাজের বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকবে হবে। বিষয়টি আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখব।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর