অজপাড়ায় আলো ছড়াচ্ছে টুটুলের 'মাতৃভাষা গণগ্রন্থাগার'

ঝিনাইদহ, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, ঝিনাইদহ, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-19 05:16:17

উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি না করে কৃষিকাজের পাশাপাশি সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম কালুহুদা গ্রামের যুবক এম কে টুটুল। অজপাড়া গায়ে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে তার প্রতিষ্ঠিত 'মাতৃভাষা গণগ্রন্থাগার'। তার লাইব্রেরির কল্যাণে গ্রামের মানুষ এখন বিভিন্ন বই ও পত্রিকা পড়তে পারছেন। 

 টুটুল তার লাইব্রেরিতে সব ধরণের বইয়ের সংগ্রহ রেখেছেন 

 

১৯৯৫ সালে ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মারা যান টুটুলের পিতা মিজানুর রহমান। বিধবা মায়ের অস্বচ্ছল সংসারে কোনমতো লেখাপড়া চালিয়ে যান তিনি। এসএসসি পাস করে টিউশনি শুরু করেন। পাশাপাশি বাবার রেখে যাওয়া একখণ্ড জমিতে চাষ শুরু করেন। পরে যশোর এমএম কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন। এখন কৃষি কাজের পাশাপাশি লাইব্রেরি চালানো তার নেশা। প্রতিদিন তার লাইব্রেরিতে পড়তে আসেন গ্রামের শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী মানুষ।

গ্রামের ছেলেমেয়েরাও তার কাছে পড়তে আসে 

 

লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা এম কে টুটুল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, '২০০০ সালের আকস্মিক বন্যায় মহেশপুর এলাকায় ব্যাপক ফসলহানি হয়। এলাকার দরিদ্র মানুষ সন্তানদের নতুন বইখাতা কিনে দিতে পারছিলেন না। সেখান থেকেই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার চিন্তা আসে। পরে বাড়ির এককোণে টিন ও বাঁশের ঘর তৈরি করে ৫০টি বই দিয়ে লাইব্রেরির যাত্রা শুরু করি। এখন বইয়ের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। পাঠ্যপুস্তকসহ কৃষি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই, মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্য চিত্র, গল্প-উপন্যাস, কবিতা-প্রবন্ধসহ সাহিত্যের সব ধরণের বই আছে এ লাইব্রেরিতে।'

তার লাইব্রেরিতে পত্রিকাও পড়তে আসেন গ্রামের মানুষ 

 

তিনি আরও বলেন, 'জ্ঞানের আলোয় মানুষকে উদ্ভাসিত এবং বর্তমান প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতেই এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য।'

লাইব্রেরিতে বই পড়তে আসা ওই গ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রুবেল জানায়, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে নিয়মিত লাইব্রেরিতে পড়তে আসে সে। অনেক বই থাকায় তাদের বই কিনতে হয় না।

তার লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার 

 

নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'টুটুলের লাইব্রেরিতে বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা পাওয়া যায়। অনেকে নিয়মিত পত্রিকা পড়তে এখানে আসেন। টুটুল শুধু লাইব্রেরি করেনি। মাদক, সন্ত্রাস ও বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্যও বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করেন।'

টুটুলের বাড়িতে টিনের ছোট একটা ঘরে লাইব্রেরির কার্যক্রম চলছে 

 

ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক আলোকিত মানুষ কাজ করে যাচ্ছেন। তেমনি একজন হচ্ছে এম কে টুটুল। তার লাইব্রেরির জন্য স্থায়ী অবকাঠামো দরকার। আমরা এ বিষয়ে তাকে সাহায্য করেছি, ভবিষ্যতেও সহযোগিতা করব।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর