ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটারের উপরে

গাইবান্ধা, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, গাইবান্ধা | 2023-08-12 15:40:59

গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৬৮ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট যমুনাসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে একের পর এক গ্রাম। 

রোববার (১৪ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, ফুলছড়ি পয়েন্টে রতনপুর-সিংড়িয়াসহ বেশ কিছু বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। সদরের কামারজানি পয়েন্টে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ পানিতে ভরপুর হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

পানি বন্দি মানুষরা স্কুলে আশ্রয় নেয়া শুরু করেছে। কামারজানি এলাকার থেকে শহরমুখী একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি ভেঙে গেছে। ফলে হাজার হাজার মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে।

স্কুলের মাঠেও হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠেছে 

 

গোঘাট ও রায়দাসবাড়ী গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির মেঝেতে কোমরপানি জমেছে। বন্যায় ভুক্তভোগী সোলেমান, আকবর, তমছের, ফয়জার ও কাইচমতি বেওয়ার ঘরের ভিতরে কয়েকদিন ধরে পানি জমে আছে। তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে হাহাকার।

এদিকে রায়দাসবাড়ী গ্রামটিতে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদের গর্ভে চলে গেছে। অনেক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ ভিটে মাটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ভিটে মাটি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে তাদের আত্নীয়-স্বজনের বাড়িতে। নদের অব্যাহত ভাঙনে ওই এলাকার জিইউকে সংস্থার পরিচালিত একটি স্কুল বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে আরও অর্ধশত ঘরবাড়ী। ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন-রাত কাটছে রায়দাসবাড়ী গ্রামের মানুষের। ভুক্তভোগী মানুষদের আবাসন ও বিশুদ্ধ পানিসহ দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।

বন্যা কবলিত মানুষ পাচ্ছে না পর্যাপ্ত ত্রাণ

 

অপরদিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ভাঙন ও বন্যা কবলিত ভাটী কাপাসিয়া, লালচামার, লালচামার গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ন কেন্দ্র-২, পাগলার চর, কাজিয়ার চর, কালাইসোতার চর, শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর (পুটিমারী), পোড়ার চর ও হরিপুর ইউনিয়নের লখিয়ার পাড়া, চরচরিতা বাড়ি, কানি চরিতাবাড়ি, চর মাদারীপাড়া, রাঘব, পাড়া সাদুয়াসহ বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।

এছাড়াও সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ভরতখালি, হলদিয়া ও ফুলছড়ির কঞ্চিপাড়া, গজারিয়া, উড়িয়া, এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কামারজানি বনিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সবুজ মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, স্কুলের মাঠে পানি উঠে যাওয়ায় স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে পানি বন্দি মানুষরা আশ্রয় নিচ্ছে।

বাড়ির ভিতরেও উঠেছে হাঁটু সমান পানি 

 

কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, পানি বন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। একই কথা জানালেন তথ্য কেন্দ্রের পরিচালক মাহাবুর রহমান।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উত্তম কুমার রায় বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বন্যা দুর্গত মানুষদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ চলছে। ঘরহারা মানুষদের ঢেউটিন দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া তাদের প্রাথমিকভাবে আশ্রয় করে দেওয়া হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড গাইবান্ধা নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর ভাঙন ঠেকাতে বালুর বস্তা ফেলানো হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর