ঘুষ নিয়ে লাইসেন্স দিচ্ছেন ফরিদপুরের ড্রাগ সুপার

ফরিদপুর, দেশের খবর

রেজাউল করিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ফরিদপুর | 2023-09-01 10:04:13

ফার্মাসিস্ট পাস করা যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের ওষুধ বিক্রির লাইসেন্স দেওয়ার কথা থাকলেও ফরিদপুরে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে শতাধিক অবৈধ লাইসেন্স দিয়েছেন ড্রাগ সুপার সুলতানা রিফাত ফেরদৌস। 

আর তার এই ঘুষ বাণিজ্য চলে মূলত অফিস সহকারী শরীফের মাধ্যমে। এই শরীফই লাইসেন্স প্রত্যাশীদের সাথে সব রকম দর-দাম মেটান। আশানুরূপ টাকার অঙ্ক মিলে গেলেই লাইসেন্সে স্বাক্ষর করেন ড্রাগ সুপার।

এভাবে জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপদাান- ওষুধের ব্যবসা চলে যাচ্ছে অযোগ্যদের হাতে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে শহর গ্রামের এমন অনেক দোকানের সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিয়েছেন।

শহর-গ্রামের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠছে একের পর এক ওষুধের দোকান। এসব দোকানে সার্বক্ষণিক একজন ফার্মাসিস্ট থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ দোকনেই ফার্মাসিস্ট নেই। ড্রাগ সুপার মাঝে মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিলেও ফার্মাসিস্ট থাকা না থাকা বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেন না।

শুধু ফরিদপুর জেলায় দুই হাজার ৩৯টি ড্রাগ লাইসেন্স ইস্যু করা আছে, যার মধ্যে ফরিদপুর সদরে রয়েছে ৭০৯টি। এদের মধ্যে ঘুষের বিনিময়ে হওয়া লাইসেন্সগুলোর কিছু নমুনা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব লাইসেন্স টাকার বিনিময়ে হয়েছে সেসব দোকানের মালিকেরা ফার্মাসিস্ট নয়। তারা ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করে অন্য কারো নামে লাইসেন্স করে তা গোপনে ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে নিজের করে নিয়েছে।

এভাবেই চলছে অধিকাংশ ওষুধের দোকানের ব্যবসা। এর বাইরে ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ে শরীফের সাথে যোগাযোগ করলে ড্রাগ লাইসেন্স সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার সমাধান করে থাকেন তিনি। তাই ফরিদপুরের ভুক্তভোগী সচেতন মহল দ্রুত অবৈধ লাইসেন্সধারীদের ব্যাপারে জেলা প্রশাসনকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন।

বিষয়টি নিয়ে জেলার সতেচন নাগরিক নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, সমাজের সচেতন মানুষ হয়তো দোকান থেকে তার ওষুধটি বুঝে আনতে পারেন। কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত, কম পড়ালেখা জানা মানুষ অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীদের হাতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তাই সরকারি বিধি অনুযায়ী শিক্ষিত ও প্রকৃত ফার্মাসিস্টদের ছাড়া ওষুদের দোকান যেন করতে না পারে, সেদিকে জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।



তিনি বলেন, অনেক সময় ছোটখাটো অসুখের জন্য সাধারণ মানুষ ডাক্তার না দেখিয়ে ওষুধের দোকান থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। একজন ফার্মাসিস্ট দোকানে না থাকলে এসব ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপত্তি ঘটতে পারে।

ফরিদপুর ড্রাগ অ্যান্ড কেমিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিবন সাহা আকাশ বলেন, সামান্য একটু ভুলে মানুষের জীবন চলে যেতে পারে। ওষুধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা, যার তার হাতে দিলে তা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য খারাপ হবে। প্রকৃত ফার্মাসিস্ট ছাড়া ওষুধ ব্যবসা করার কোনো সুযোগ নেই। টাকার বিনিময়ে কোনো লাইসেন্স দিয়ে থাকলে আমরা তা খতিয়ে দেখে কেন্দ্রে জানাব।

ফরিদপুর ড্রাগ অ্যান্ড কেমিস্ট সমিতির সহ-সভাপতি মাজাহারুল আলম চঞ্চল বলেন, ওষুধের সহজ প্রাপ্যতা দরকার আছে। তবে সেটা নিয়মানুযায়ী হতে হবে। ওষুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়ে যার কোনো জ্ঞান নেই, সেধরনের লোক ব্যবসায় প্রবেশ করলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

ফরিদপুরের ড্রাগ সুপার সুলতানা রিফাত ফেরদৌস তার বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, আমি কোনো টাকা-পয়সা নিয়ে লাইসেন্স দিই নাই। তবে অফিসের কেউ এমন কাজে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফার্মাসিস্ট না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, জেলায় ২০৩৯টি লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে অনেকে ফার্মাসিস্ট আবার অনেক দোকানে ফার্মাসিস্ট নেই। তারা অন্য কোনো ফার্মাসিস্টের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আমাদের লোকবল সংকট থাকায় সব সময় সব বিষয়ে তদারকির সুযোগ হয় না।

প্রসঙ্গত, সুলতানা রিফাত ২০১৩ সালে ফরিদপুরে ড্রাগ সুপার পদে যোগদান করেন। সে সময় তিনি গোপালগঞ্জে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ আট বছর ফরিদপুর ড্রাগ সুপার হিসেবে রয়েছেন তিনি। এর মধ্যে দু’দফায় ছয় মাস করে তিনি ফরিদপুরে ছিলেন না। বর্তমানে ফরিদপুরের পাশাপাশি তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রাজবাড়ীর দায়িত্ব পালন করছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর