সাগরে বিলীন হচ্ছে ঐতিহ্যের ঝাউবন

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কক্সবাজার | 2023-09-01 16:33:36

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজার। এ নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনকারী সবুজ বেষ্টনী ঝাউবন এখন হুমকির মুখে পড়েছে। টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া ও ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙছে বালিয়াড়ি। আর সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে ঝাউবন।

জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২-৭৩ সালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে ঝাউবন গড়ে তোলা হয়। এ সময় বালিয়াড়ির প্রায় ৫শ হেক্টর জায়গায় লাগানো হয় সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি ঝাউগাছ। পরে বাগানের আয়তন আরও বাড়ে। এই সবুজ বেষ্টনী বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি একে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকেও রক্ষা করে।

তবে, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় এবং ঢেউয়ের ধাক্কায় গেল কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুমে সৈকতের বালিয়াড়িতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ঝাউবনের। গত কয়েক বছরে প্রায় ২শ হেক্টর বাগানের পাঁচ লাখেরও বেশি ঝাউ গাছ সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ঝাউবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

শহরের বাহারছড়ার সেলিম উদ্দিন জানান, সৈকতের ঝাউবন প্রতি বছরের জোয়ারের তোড়ে ভেসে যায়। চলতি বর্ষায় জোয়ারের পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জোয়ারের পানিতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে ঝাউবনের।

একই এলাকার মোহাম্মদ নাসির জানান, সৈকতে সামুদ্রিক জোয়ারের পানির তোড়ে যে হারে ঝাউগাছ বিলীন হচ্ছে, সেই হারে নতুন বনায়ন হচ্ছে না। তাই কক্সবাজার শহরটি রক্ষার জন্য এবং পর্যটন শহরের সৌন্দর্য রক্ষার স্বার্থে সৈকতে নতুন করে ঝাউ গাছ লাগানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম জানান, প্রতি বছরই বর্ষার এমন সময়ে সাগরের জোয়ারের পানি ফুঁসে উঠে। যদি এভাবে ঝাউবন বিলীন হতে থাকে, তাহলে এক সময় বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়বে কক্সবাজার শহর। তাই দ্রুত একটি বাঁধ নির্মাণের দাবি তুলেছেন তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, সৌন্দর্য বর্ধনকারী সবুজ এই বেষ্টনী রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তনয় কুমার ত্রিপুরা জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কক্সবাজারের ঝাউবন রক্ষায় আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগিরই ঝাউবন রক্ষায় একটি বাঁধ নির্মাণেরও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যা দ্রুত বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রোপণকৃত ঝাউবন রক্ষায় কাজ চলছে। কীভাবে ঝাউবন রক্ষা করা যায় সে ব্যাপারে আমরা আলোচনা করছি। যেহেতু এটা কক্সবাজারের ঐতিহ্য, তা রক্ষা করা অবশ্যই প্রয়োজন।’

প্রসঙ্গত, ঝাউবন ক্রমশ বিলীন হয়ে যাওয়ায় একদিকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পর্যটন শহর কক্সবাজার। গত কয়েক বছরে বিলীন হয়ে গেছে ৫ লাখেরও বেশি গাছ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর