সমাজসেবার আড়ালে নিয়োগ জালিয়াতি করত রনি

নাটোর, দেশের খবর

নাইমুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নাটোর | 2023-08-25 16:26:20

নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে পুলিশসহ বিভিন্ন বিভাগে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বেশ কয়েক বছর ধরেই জালিয়াতি করে আসছিল ফজলুর রহমান রনি। এভাবে অল্প দিনেই বিপুল অর্থের মালিক হয়েছে সে।

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের সাইদুল মন্ডলের ছেলে রনি। স্থানীয়ভাবে সে ‘সমাজসেবক’ হিসেবে পরিচিত। বস্তুত সে একজন ‘প্রতারক’।

সম্প্রতি নাটোরে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে রনি। তারপরই তার আসল চেহারা জনসম্মুখে উন্মুক্ত করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, নিয়োগ পরীক্ষার আগেই পরীক্ষার্থীদের সাদা স্ট্যাম্পে এবং চেকে স্বাক্ষর নিয়ে রাখত রনি। কেউ টাকা না দিলে চেক ডিজঅর্নার মামলা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ভয় দেখাত।

 

Natore Criminal
এভাবেই সমাজসেবার কাজে নিজেকে যুক্ত দেখাত প্রতারক চক্রের রনি

আটকের পর তার নিজ এলাকা বড়াইগ্রামে রীতিমত আলোড়ন তৈরি হয়েছে। যে রনিকে সমাজসেবক হিসেবে জানতেন সবাই, সেই রনি প্রতারক হিসেবে ধরা পড়েছে!

স্থানীয়রা জানান, রনি ঢাকার কোনো এক কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তবে এলাকায়ই বেশির ভাগ সময় থাকত। আটকের আগ পর্যন্ত সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত ছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড়াইগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতি জানান, ছাত্রলীগের সদস্য না হয়েও বিভিন্ন সময় দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করত রনি। পরে টাকার জোরে উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য হয়ে সভাপতি পদে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়েছিল। সে সময় সভাপতি হওয়ার জন্য এলাকায় বিভিন্ন বিলবোর্ডও টানিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি হতে পারেনি।

আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মসূচিতেও থাকত রনি

 

আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে রনি। পুলিশ জানায়, আলতাব হোসেন নামে রনির কথিত এক মামা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মেধাবী শিক্ষার্থীদের দিয়ে মূল পরীক্ষার্থীর বদলে অন্যজনকে দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ায়; যা বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ছবি টেম্পারিং করে যেকোনো নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র তৈরি করে একজনের বদলে অন্যজনকে পরীক্ষা দেওয়ায় ব্যবস্থা করে দিত কথিত ওই মামা।

নাটোর জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন জানান, রনি পুলিশ, সমাজসেবা কার্যালয়সহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জালিয়াতি করে আসছিল। সে বৃহৎ একটি চক্রের হয়ে উত্তরাঞ্চলের নাটোর, পাবনা এবং সিরাজগঞ্জ জেলা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। এসব অপকর্ম ঢাকার জন্য সে সমাজসেবক সাজে। এবারের কনস্টেবল নিয়োগে জেলা পুলিশ বায়োমেট্রিক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ জালিয়াতি ঠেকানোর কৌশল গ্রহণ করে। এতেই উঠে আসে সমাজসেবার আবরণে চালানো জালিয়াতির এই ঘটনা। ভবিষ্যতে এমন জালিয়াতি ও প্রতারণার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর