২০৬ টাকায় এতিম দুই মেয়ের পুলিশে চাকরি

মেহেরপুর, দেশের খবর

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা ২৪. কম, মেহেরপুর | 2023-08-20 12:29:23

মাত্র ২০৬ টাকায় এতিম দুই মেয়ের পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েছে। এতে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে মেহেরপুরের মুজিবনগর সরকারি শিশু পরিবারে।

এতিম লতা খাতুন ও প্রিয়া খাতুন ছোটবেলা থেকেই এই শিশু পরিবারের বাসিন্দা। মেধার ভিত্তিতে তারা পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। এতে নিশ্চিত হয়েছে তাদের উজ্জল ভবিষ্যৎ- এমনটি জানালেন শিশু পরিবারের শিক্ষকরা।

জানা গেছে, পুলিশ কনস্টেবল ভর্তির সময় সরকারি ১০৩ টাকা ফিস জমা দিতে হয়। কোনো প্রকার ঘুষ বাণিজ্য ছাড়াই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশ কনস্টেবল পদে লোক নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলেন মেহেরপুর পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান। এতে উদ্বুদ্ধ হয়েই এই দুই এতিম গেল ২৪ জুন মেহেরপুর পুলিশ লাইনে  বাছাই পরীক্ষায় অংশ নেয়। গেল কয়েক দিন বিভিন্ন পরীক্ষা সম্পন্ন করে জেলার দুই এতিমসহ ১৮ জন নারী ও পুরুষ পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ায় আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে চাকরি পাওয়াদের পরিবারে।

মুজিবনগর সরকারি শিশু পরিবারে পিতার স্নেহে এতিম মেয়েদের মানুষ করছেন প্রধান শিক্ষক তন্ময় কুমার সাহা। শুক্রবার (২৮ জুন) পুলিশ লাইনে চাকরি পাওয়াদের চূড়ান্ত মেডিকেল সম্পন্ন হয়। সেখানে দুই মেয়ে লতা ও প্রিয়াকে নিয়ে এসেছিলেন তন্ময় কুমার সাহা।

চাকরি হওয়ায় আনন্দ আবেগে চোখের পানি মুছতে মুছতে তন্ময় কুমার সাহা বলেন, আমার এখানে ৯০ জন এতিম কন্যা শিশু রয়েছে। এ বছর লতা ও প্রিয়া এসএসসি পাশ করে। তাদের নিয়ে আমার চিন্তার সীমা ছিল না। সরকারি নিয়মানুযায়ী এসএসসি’র পরে তাদের বিদায় দিতে হবে। তাই এই চাকরির মধ্য দিয়ে আমার মেয়ে দু’টির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হয়েছে।

চাকরিপ্রাপ্ত প্রিয়া খাতুনের বাড়ি মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে। ছোটবেলায় তার পিতামাতা মৃত্যু বরণ করে।

প্রিয়া জানায়, আমি অনেক অনেক গর্বিত। কেননা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে। মেধার ভিত্তিতে আমি চাকরি পেয়েছি। একই কথা জানায় লতা খাতুন।

প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে তারা দু’জন বলেন, তন্ময় কুমার সাহা আমাদেরকে পিতামাতার স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছেন। পুলিশে লাইনে আসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড়সহ সব সময় তিনি আমাদের চোখে চোখে রেখেছিলেন। এটি কিন্তু উঁনার সরকারী দায়িত্ব নয়। পিতার মতই দায়িত্ব পালন করে তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠিত করে দিলেন।

চাকরির বিষয়ে তারা দু’জন বলেন, ঘুষ ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে তা আমাদের বিশ্বাসই ছিল না। আমাদের মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি হয়েছে। এটি ভাবতেই গর্ববোধ হচ্ছে। তাই চাকরিতে দায়িত্ব পালন করার সময় মানুষের ভালোর জন্যই সব কিছু করতে চায়। তাছাড়া আমাদের পিতা (প্রধান শিক্ষক) ও শিশু পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্যও কিছু একটা করতে চায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল কয়েক বছর ধরে পুলিশে নিয়োগের বিষয়ে বড় ধরনের ঘুষ বাণিজ্যর বিষয়টি সকলের মুখে মুখেই ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের আলোকে সারা দেশের পুলিশ সুপারবৃন্দ মেধা ও যোগ্যাতার ভিত্তিতে বিনা পয়সায় কনস্টেবল পদে লোক ভর্তির গোষণা দেন। নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার বিষয়টি তাই জনমনে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মেহেরপুর জেলায় ১৮ জন লোক ভর্তির ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের কোন অভিযোগ না থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চাকুরাপাপ্তরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

এ প্রসঙ্গে, মেহেরপুর পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় কিনা তা আমারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর যা চাওয়া আমরা চাই বাস্তবায়ন করেছি। এখন থেকে টাকা ছাড়াও যোগ্য ও মেধাবিরা পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরিতে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর