পাকিস্তানি হায়েনারা হত্যা করে দানবীর রনদা প্রসাদকে

টাঙ্গাইল, দেশের খবর

অভিজিৎ ঘোষ, ডি‌স্ট্রিক্ট ক‌রেসপ‌ন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল | 2023-08-25 01:29:30

দানবীর হি‌সে‌বে খ্যাত রনদা প্রসাদ সাহা। আজীবন আর্ত মানবতার সেবায় কাজ করে গেছেন তি‌নি। নারী শিক্ষা ও জাগরণের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শিক্ষাসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কাজ করেছেন স্বাধীনতার পক্ষে। স্থানীয় রাজাকার মাহবুবুর রহমান পাকিস্থানি হায়েনাদের সহায়তায় হত্যা করেন রনদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ও ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের।

জানা গে‌ছে, উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, নারী শিক্ষা ও নারী জাগরণের অগ্রপথিক ছি‌লেন দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা। তার জন্ম টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। আজীবন আর্ত মানবতার সেবায় কাজ করেছেন তিনি। টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দাতব্য চিকিৎসালয়। এর মধ্যে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অন্যতম। মহান মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি তার প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছেন চিকিৎসা ‌সেবা। পাকিস্থানি হায়েনাদের থাবায় আহত নির্যাতিত নিরীহ বাঙালিদের খুঁজে খুঁজে দিয়েছেন চিকিৎসা এবং আশ্রয়। এ কারণে রনদা প্রসাদ সাহাকে হত্যার পরিকল্পনা করে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী।

১৯৭১ সালের ৭ মে স্থানীয় রাজাকার মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একদল রাজাকার হত্যাযজ্ঞ চালান গোটা মির্জাপুরে। তারা সেদিন রনদা প্রসাদ সাহাকে ধরতে তার বাড়ি ও হাসপাতালসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যান। কিন্তু তাকে ধরতে না পেরে জ্বালিয়ে দেন কয়েকটি গ্রাম। হত্যা করেন বহু নিরাপরাধ বাঙালিকে। রাজাকার মাহবুবুর রহমান ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাড়িতে আক্রমণ চালান। এ সময় রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও দারোয়ানসহ সাতজনকে অপহরণ করে হয়। পরে সবাইকে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর তাদের মরদেহ আর পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, রণদা প্রসাদ সাহার মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয় মির্জাপুরসহ সারাদেশের।

হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হন রণদা প্রসাদ সাহা (উপরে বাঁয়ে),তার ছেলে (উপরের সারির মাঝে) ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গীরা, ছবি: সংগৃহীত   

 

রণদা প্রসাদ সাহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন)।  দুই মাস অপেক্ষমাণ থাকার পর বুধবার (২৬ জুন) সকালে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য ওই দিন ধার্য করেন।

গত ২৪ এপ্রিল রণদা প্রসাদ সাহা হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার শুনানি হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ রায়ের দিন ধার্য করা হলো।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত। তার সঙ্গে ছিলেন তাপস কান্তি বল। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তানিম।

রণদা প্রসাদ সাহাকে হত্যার অভিযোগে গত বছরের ২৮ মার্চ আসামি মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি আসামি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
মাহবুবুর রহমান জামায়াতের সমর্থক ছিলেন। তিনি তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রতিবারই পরাজিত হন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর