বিশেষ অভিযানেও থেমে নেই ইয়াবার পাচার

কক্সবাজার, দেশের খবর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-25 15:20:57

মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। বর্তমান সময়ে বিষাক্ত ইয়াবার ফাঁদে পড়েছে সারা দেশ। সরকারের সিদ্ধান্তে বিশেষ অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু শত অভিযানেও থামানো যায়নি ইয়াবা পাচার। কথিত বন্দুকযুদ্ধে শত ইয়াবা কারবারি নিহত হলেও মরণ নেশা ইয়াবা পাচার থেকে বিরত থাকেনি অনেকেই। প্রতিনিয়ত র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির হাতে আটক হচ্ছে ইয়াবার বড় বড় চালান। 

আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, ১০২ ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণের পরও থামনো যাচ্ছে না ইয়াবার বিস্তার। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে এ পর্যন্ত মারা গিয়েছে শতাধিক ইয়াবা কারাবারি। তাদের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দেশের টপ ইয়াবা কারবারি হাজী সাইফুল করিমও নিহত হয়। এছাড়া প্রতিনিয়ত আটক হচ্ছে ইয়াবার বড় বড় চালান। 

এর মধ্যে, গত ২ জুন টেকনাফের নাফ নদীর দমদমিয়া এলাকা দিয়ে প্রবেশের সময় ৯ লাখ ৬২ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। নাফনদী পাড়ি দিয়ে ইয়াবাগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল বলে জানায় বিজিবি।

রোববার (২৬ মে) ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফে ইয়াবাসহ আব্দুল আমিন নামে এক পাচারকারীকে আটক করেছে র‌্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে ১ লাখ ইয়াবা ও ৩ লাখ নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।

টেকনাফের হাতিরঘোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব ইয়াবাসহ তাকে আটক করা হয়। আটক আমিন কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের ফজলুল হকের ছেলে।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে পালংখালী থেকে ১৯ হাজার ৭০০ ইয়াবাসহ দুইজনকে আটক করে র‌্যাব। এসময় একটি ট্রাকও জব্দ করা হয়। গত ২০ মে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজার লিংরোড থেকে ৫ হাজার ইয়াবাসহ দুইজনকে আটক করা হয়। এ ইয়াবাগুলো ঈদ উপলক্ষে তারা খুচরা বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিল বলে র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।

এছাড়াও গত ২৩ মে বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার মাদকদ্রব্য অধিদফতরে গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়ে ৯৪০ সাদা রংয়ের ইয়াবাসহ টেকনাফের পুরান পল্লানপাড়ার মৃত সৈয়দ উল্লাহর স্ত্রী জাহেদা বেগমকে (৪৭) আটক করে।

২৪ মে রাত ১১ টার দিকে শেখ আজিজুল মার্কেটের সামনে থেকে এক হাজার ইয়াবাসহ মো. জুবাইর (২০) নামে এক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। একই দিন গফুর মার্কেটের সামনে থেকে ১ হাজার ইয়াবাসহ ছৈয়দুল ইসলাম (২০) নামে একজনকে আটক করে মাদকদ্রব্য অধিদফতরের গোয়েন্দারা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বার্তা ২৪.কম-কে বলেন, ‘দেশে মাদক বিরোধী অভিযান কঠোর হলেও রাঘববোয়ালরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। যদি শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে এ ইয়াবা বিস্তার থামানো কঠিন হবে। যদিও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।’ 

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের মুখপাত্র এইচ এমন নজরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, সাইফুল করিম নিহত হলেও তার আশে-পাশের ব্যবসায়ীরা এখনো সচল রয়েছে। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। কিছু আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য এখনো রহস্যজনক ভূমিকায় রয়েছে ইয়াবা দমনে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

কক্সবাজার র‌্যাব ১৫ অধিনায়ক উইন কমান্ডার আজিম আহমেদ বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘র‌্যাবের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অভিযানে  গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে। তবে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা সচরাচর ধরা না পড়ায় ইয়াবার বিস্তার থামাতে বেগ পেতে হচ্ছে। আশা করছি চলমান অভিযানে ইয়াবা নির্মূল সম্ভব। এ অভিযান অব্যাহত রাখবে র‌্যাব।’ 

কক্সবাজার মাদক দ্রব্য অধিদফতরের সহকারি পরিচালক সোমেন মন্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘শুধু ইয়াবা নয়, এ সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার হচ্ছে গাঁজাও। সম্প্রতি আমাদের গোয়েন্দা কয়েক কেজি গাঁজাসহ দুই নারীকে আটক করে। আমরা অভিযান আরও জোরদার করছি।’

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক আলী হায়দার আজাদ আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘চেকপোস্টে তল্লাশির সময় আটক হচ্ছে ইয়াবা পাচারাকারিরা। প্রতিদিন কোনো না কোনভাবে আটক হচ্ছে ইয়াবার চালান। তাই বিজিবি সতর্ক রয়েছে।’

উল্লেখ্য যে, ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণের পরও ইয়াবার পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কয়েকটি বড় বড় চালান আটক করা হয়। কিন্তু কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না ইয়াবা পাচার। বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবা কারাবারি নিহতের সংখ্যাও কম নয়। আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবসেও মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার কক্সবাজারের মানুষ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর