মেরিন ড্রাইভের সংযোগ সড়ক বন্ধ, ভোগান্তিতে পর্যটকরা

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার | 2023-08-12 14:04:25

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের সংযোগ সড়কে চলছে সংস্কারের কাজ। সড়ক বন্ধ থাকায় মেরিন ড্রাইভে যাওয়া আসা নির্ভর করতে হয় জোয়ার-ভাটার ওপর। এমনকি বাড়তি ভাড়া দিয়েও মেলে না পরিবহন। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। অনেক পর্যটক কক্সবাজার গিয়ে থাকতে চান না। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের।

জানা গেছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এখন পর্যটকে ভরপুর। পর্যটকরা এ সময় সৈকত ছাড়াও মেরিন ড্রাইভ, পাথুরে সৈকত ইনানী, হিমছড়ির ঝরনা ও পাহাড় ঘেরা দরিয়ানগরে ঘুরতে যান। কিন্তু কলাতলী থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত সংযোগ সড়কটি সংস্কারের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিকল্প পথ হিসেবে সৈকতের বালিয়াড়ি পথটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ওই পথে দুর্ঘটনা ঘটায় আগ্রহ হারাচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। এছাড়া বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তো আছেই।

মেরিন ড্রাইভ ভ্রমণে আসা টাঙ্গাইলের মিনারা আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘রাস্তায় গাড়ি আটকে গেছে। ফলে হেঁটেই দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। ফিরে গিয়ে গাড়ি ধরতে পারব কিনা জানি না। মূল রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হলো।’

ঢাকা থেকে আসা সুজন হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মাত্র এক-দেড় কিলোমিটার সড়কের জন্য পুরো মেরিন ড্রাইভের দুর্নাম হচ্ছে। এত বড় সড়ক নির্মাণ করলেও অল্প সড়ক সংস্কারের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সংস্কারের আগে বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।’

স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এভাবে কাজ চলতে থাকলে আগামী ৬ মাসেও কাজ শেষ হবে না। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় প্রতিদিন শতশত গাড়ি রাস্তায় আটকে যাচ্ছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সৈকত দিয়ে গাড়ি চলায় জলজপ্রাণী চরম ক্ষতিরমুখে পড়ছে। এটা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এছাড়া জোয়ারের সময় পানিতে গাড়ি আটকে যাচ্ছে। ফলে পর্যটকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

গত ১ ফেব্রুয়ারি ওই সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ধীরগতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। যদিও পৌর মেয়র আগামী এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা জানালেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে কাজ শেষ হতে সময় লাগবে।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ইসিএ এলাকা হওয়ায় এখানে কোনো স্থাপনা করা যাবে না। এমনকি গাড়ি চলাচলও নিষিদ্ধ। তারপরও তিন মাস ধরে এই সৈকত দিয়ে যান চলাচল করছে।’

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে সংস্কার কাজ ২৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ আগামী এক মাসের মধ্যে শেষ হবে। সড়কটি টেকসই করতে একটু সময় লাগছে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান বিল্ডার্সের কক্সবাজারের কর্মকর্তা কিশোর বড়ুয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সড়ক সংস্কার করতে আমরা বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। স্থানীয় বাসিন্দারা সড়কের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করায় কাজ এগোচ্ছে না।’

উল্লেখ্য, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ঘেঁষে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিনড্রাইভ। ২০১৭ সালের ৬ মে এই সড়কটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯১-৯২ সালে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু মেরিন ড্রাইভের শুরুতে প্রায় ১৩০০ মিটার সড়ক ২০০০ সালে সামুদ্রিক ভাঙনে বিলীন হয়। তবে ২০০৫-০৬ সালে কলাতলী গ্রামের ভেতর দিয়ে সংকীর্ণ সড়কটি প্রশস্ত করে মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর