কমিটির সহায়তায় কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি দখল!

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কক্সবাজার | 2023-08-25 07:19:33

কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকার খাসজমি দখলের পর এবার সৈকতের বালিয়াড়ি দখলে নেমেছে প্রভাবশালী মহল। কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কয়েকজন সদস্যকে ম্যানেজ করে সৈকতের পর্যটন স্পটগুলোতে ঝুপড়ি দোকান নির্মাণের নামে দখল উৎসবে নেমেছেন তারা। ঝুপড়ি দোকান ছাড়াও সৈকতের ইজি চেয়ার, ছাতা, স্পিডবোট, বিচকার, ঘোড়া, বিচ ফটোগ্রাফার, ভ্রাম্যমাণ চা-কফি, ডাব, মুড়ি-বাদাম বিক্রেতাসহ সব কিছু চলছে তাদের ইশারায়।

সম্প্রতি নতুন করে বিচ দখল করে দোকান নির্মাণের ঘটনায় নিন্দা জানায় সুশীল সমাজ। ফলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছর কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন লাখো পর্যটক। পর্যটকদের সুবিধার্থে জেলা প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সৈকতের লাবনী পয়েন্ট ও সুগন্ধা পয়েন্টসহ বিভিন্ন জায়গায় ২৫০টি ভ্রাম্যমাণ দোকানের অনুমোদন দেয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি প্রভাবশালী মহল এক হাজারেরও বেশি ঝুপড়ি দোকান নির্মাণ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে এসব ঝুপড়ি দোকানের বিষয়ে জেলার সুশীল সমাজ, বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামমাত্র উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু পরে আবারও ওইসব দোকান নির্মাণ করা হয়।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পর্যটন নগরী হিসেবে ভ্রাম্যমাণ হকারদের জন্য একটি মার্কেট করা হয়। সেখানে সামান্য ফি দিয়ে দোকান পাওয়ার কথা। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির অপতৎপরতায় তা হয়ে ওঠেনি। এসব দোকান চলে যায় বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের হাতে। ফলে হতভাগা হকাররা বঞ্চিতই থেকে যান।

আরও জানা গেছে, সৈকতে রাতের আঁধারে দোকান নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ করা হলে উচ্ছেদ অভিযান পারিচালনা করা হয়। কিন্তু এসবের পরও থেমে থাকেনি বালিয়াড়ি দখল করে ঝুপড়ি নির্মাণ।

সরেজিমন দেখা গেছে, চারদিকে ত্রিপল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে হকার মার্কেটটি। এর ভেতরে রয়েছে জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ করা অংশও। অর্থাৎ গোপনে চলছে দখল। যাদের নামে দোকান বরাদ্দ হয়েছে তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময় অন্যজনকে ভাড়া দিয়েছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য নঈমুল হক চৌধুরী টুটুলের নামে ছয়টি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিমের নামে চারটি, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহজাহানের নামে ছয়টি, জনৈক লালুর নামে ৩০টি, যুবদল নেতা জয়নালের নামে ২৫টি দোকানের অনুমোদন রয়েছে।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সৈকতে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান উচ্ছেদে জেলা প্রশাসন যে অভিযান পরিচালনা করেছে, সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। আর যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তার কার্যক্রম এখনো দৃশ্যমান হয়নি।’

আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের সমন্বয়ক কলিম উল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সৈকতে উচ্ছেদ অভিযান লোক দেখানো। এটি বিচ ম্যানজমেন্ট কমিটির আইওয়াশ মাত্র। হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে সৈকতে ৩০০ গজের মধ্যে কোনো স্থাপনা রাখা যাবে না। আমরা আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের পক্ষে। দ্রুত এসব ঝুপড়ি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হোক।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে স্থাপনা নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তবে এ মুহূর্তে কোনো দখল হচ্ছে কিনা তা আমার জানা নেই।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর