জুয়ার টাকা না পেয়ে স্ত্রীর গায়ে গরম সেমাই ঢেলে দিলেন স্বামী

লালমনিরহাট, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট | 2023-08-25 10:14:47

বিয়ে হওয়ার পর থেকে স্বামী মাসুদ স্ত্রী আপিয়ার কাছে কারণে-অকারণে টাকা দাবি করত। স্বামীর দাবিকৃত টাকা দিতে কখনো ইট-ভাটায় আবার কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন স্ত্রী আপিয়া বেগম। আর এসব টাকা ‘জুয়া’ খেলে উড়িয়ে দিতেন স্বামী মাসুদ। টাকা না দিলেই নির্যাতন করত স্বামী।

সোমবার (১০ জুন) রাতে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর কাছে টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে মাসুদ। এক পর্যায়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।

মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে পরিবারের জন্য সেমাই রান্না করেছিলেন আপিয়া বেগম। ওইসময় সন্তানেরা দুষ্টুমি করলে শাসন করেন মা আপিয়া বেগম। সেই সুযোগে কড়াই ভর্তি গরম সেমাই আপিয়ার শরীরে ঢেলে দেন মাসুদ। এতেই ঝলসে যায় আপিয়ার শরীর।পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম সারডুবি গ্রামে। অভিযুক্ত মাসুদ উপজেলার পশ্চিম সারডুবি গ্রামের আব্দুস সামাদের পুত্র। আর নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ আপিয়া একই গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ে।

বিকেলে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ঝলসে যাওয়া শরীরের যন্ত্রণায় হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন আপিয়া বেগম। তার ঘাড় ও পিঠের বেশ কিছু অংশ ঝলসে গেছে।

এ সময় আপিয়া কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, 'আমার স্বামী টাকার জন্য সব সময় আমাকে মারধর করেন। আমি ইট ভাটায় কাজ করে টাকা আয় করে তাকে দেই। আর সে সেই টাকা দিয়ে আমার স্বামী জুয়া খেলে শেষ করে। গত সোমবারও আমাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলে। আমি টাকা আনতে যায়নি বলে, বাচ্চাকে শাসন করার দোষে আমাকে প্রচণ্ড মারধর করেছে। শুধু তাই নয়, কড়াই ভর্তি গরম সেমাই শরীরে ঢেলে দিয়েছে সে।' মূলত টাকার জন্যই আমার শরীরে গরম সেমাই ঢেলে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে- বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে ওঠেন আহত গৃহবধূ আপিয়া বেগম।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার নাঈম হাসান নয়ন বলেন, 'আপিয়া নামে এক নারীর শরীরের কিছু অংশ ঝলসে গেছে। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।'

আপিয়ার মা মর্জিনা বেগম বলেন, 'আমরা গরিব মানুষ তবুও যতটুকু পারি জামাইকে টাকা দিয়ে সাহায্য করি। জামাই খুবই খারাপ। বিয়ের পর থেকে আমার মেয়েকে শুধু অকারণে মারধর করেন। আমি এর সঠিক বিচার চাই।'

বড়খাতা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল সোহেল বলেন, 'মাসুদ একজন খারাপ মানুষ। সে প্রায় সময় তার স্ত্রী আপিয়াকে মারধর করে। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে অনেক বার বিচার করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের থানায় অভিযোগ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।'

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) ওমর ফারুক বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর