কাঁঠালবাড়ী ঘাটে শিশুকুলিদের জীবন-জীবিকা

মাদারীপুর, দেশের খবর

মাসুদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, গোপালগঞ্জ | 2023-09-01 09:31:36

ঈদ মানেই আনন্দ। তবে সেই আনন্দ পূর্ণতা পায় স্বজনদের কাছে ফেরার পর। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নাড়ির টানে তাই রাজধানী থেকে ঘরমুখো হয়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ।

ঈদের দিন যতই এগিয়ে আসছে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে যাত্রীদের চাপ ততই বাড়ছে। আর এ সুযোগেই মালামাল বহন করে বাড়তি আয় করছে বিভিন্ন বয়সের শিশুকুলিরা।

ঘাটে লঞ্চ ভিড়তেই পাঁচ-সাতজন কুলি গিয়ে যাত্রীদের ঘিরে ধরছে তাদের লাগেজ, মালামাল বহনের আর্জি নিয়ে। কখনো দরকাষকষি আবার কখনো যাত্রী খুশি হয়ে যা দেবে তাই নেওয়ার শর্তে মালামাল বহন করে এসব কুলিরা।

দারিদ্র্যের কষাঘাতে দুই বেলা দুই মুঠো খাবার যোগাতে এসব শিশুকুলিদের শ্রম না বেচে উপায়ও নেই। ঈদে তাদের ছোট্ট ভাই-বোন ও নিজের জন্য নতুন জামা-কাপড় কেনার আশায় সারাদিন শ্রম দিচ্ছে শিশুকুলিরা। কখনো নিজের থেকে বড় সাইজের ব্যাগ, কখনো মাত্রাতিরিক্ত ওজনের মালামাল মাথায় বহন করে লঞ্চ থেকে বাসে তুলে দিচ্ছে তারা। বিনিময়ে পাচ্ছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। আরো কিছু বাড়তি টাকার আশায় কখনো কখনো তারা লাগেজের মালিককে অনুরোধও করে।

কিছু শিশু সারাবছরই কাঁঠালবাড়ী ঘাটে কুলির কাজ করে, আবার কেউ কেউ ঈদে নতুন জামা-কাপড় ও বাজারসদাই করতে ঈদ মৌসুমে ঘাটে আসে কুলির কাজ করতে। একজন শিশুকুলি দিনে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করে থাকে। তবে এখানে সারাবছরই যারা কুলির কাজ করে তাদের আয় মাসে ২০-২৫ হাজার টাকার মতো।

মারজান হোসেন নামে ১২ বছরের এক শিশুকুলি বার্তা২৪.কম’কে বলে, বাবা অনেক আগে আমাকে আর মাকে রেখে চলে গেছে। পেটের ভাত জুটাতে তাই কাঁঠালবাড়ী ঘাটে কুলির কাজ করি। ঈদে বাড়তি আয়ের জন্য আগের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করছি।

ইয়াসিন নামে আরেক শিশুকুলি বলে, ঈদে ভালো জামা-কাপড় কিনতে পারি না। তাই এখানে এসে কুলির কাজ করছি। এখানকার আয় দিয়ে মা, বোন ও নিজের জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনবো। ঈদের সময় একটু বেশি টাকা দরকার, কারো কাছে বাড়তি টাকা চাইলে অনেক সময় চর-থাপ্পরও খেতে হয়।

শাহিন মাতুব্বর নামে এক যাত্রী বলেন, ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছি, ঘাটে লঞ্চ ভিড়তেই কুলিরা এসে হাজির। তাদের বেশিরভাগই শিশু। ওদের অনুরোধে মালামাল বহনের সুযোগ না দিয়েও পারলাম না। মাল বাসে পৌঁছে দেওয়ার পর খুশি হয়ে কুলিকে ৫০ টাকা দিয়েছি।

কুলিদের দলনেতা বাবুল শিকদার বলেন, এখানে বিভিন্ন বয়সের কুলি কাজ করে। কিছু কুলি সারাবছর শ্রম দেয়, কেউ সপ্তাহে একবার আবার কেউ কেউ ঈদ মৌসুমে এসে সারাদিন শ্রম দিয়ে আয় রোজগার করে।

মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোকজন এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে জানিয়ে বাবুল শিকদার বলেন, শ্রমিক কার্ড পেলে কুলিদের কাজ করতে সুবিধা হতো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর