সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আলোর পথ দেখাচ্ছেন একদল তরুণ

গাইবান্ধা, দেশের খবর

তোফায়েল হোসেন জাকির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা | 2023-08-30 04:40:54

গাইবান্ধার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে আসছেন একদল তরুণ। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এভারগ্রীন জুম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় গাইবান্ধা রেলওয়ে কলোনিতে গড়ে তুলেছেন ‘জুম বাংলাদেশ’ নামের স্কুলটি।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৯ জুন ‘জুম বাংলাদেশ স্কুল’ গাইবান্ধা শাখার যাত্রা শুরু হয়। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্থানীয় একদল তরুণ নিঃস্বার্থ মানবসেবা, শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন।

ইতোমধ্যেই পাঠশালায় শিক্ষার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ জনে। এসব শিক্ষার্থীদের বিনা খরচে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। সপ্তাহে দুই দিন বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পাঠদান করেন সংগঠনের দায়িত্বশীলরা। সেখানে শিশু শিক্ষার্থীরা স্কুলের পাঠ নেওয়ার পাশাপাশি শিশুতোষ বিভিন্ন ধরনের ছবি ও গল্পের বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাড়া করা জায়গায় চলছে স্কুলটি। বর্তমানে অবকাঠামো না থাকায় নিয়মিত পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। এক কক্ষে গাদাগাদি করে বসতে হয় শিশুদের। নেই কোনো বেঞ্চ, পাটি বিছিয়েই চলছে পাঠদান।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অক্ষর-জ্ঞান ছাড়াও নৈতিক বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। শিক্ষাদানের পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ, শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান, স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছেন এই তরুণরা। সবই হচ্ছে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। শত ব্যস্ততার মাঝেও তরুণরা বিকাল হলেই ছুটে আসেন স্কুলে শিশুদের পাঠদান করতে। বই-খাতার পাশাপাশি পাঠদান শেষে পুষ্টিকর খাবারও পরিবেশন করা হয়।

এখানে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা দেওয়া হয়। বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, ছবি আঁকা, গল্প কিংবা গানের আসর সবই রয়েছে স্কুলটির পাঠ্য তালিকায়। এ পাঠশালার শিক্ষার্থীদের বয়স ছয় থেকে ১৪ বছরের মধ্যে।

স্কুলটিতে পাঠদান শুরু হয় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে। তারপর পবিত্র কোরাআন তেলাওয়াত হয়। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা প্রদান, মানসিক বিকাশ সাধন ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনের অনুপ্রেরণা প্রদানের উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে গাইবান্ধার ‘জুম বাংলাদেশ স্কুল’।

স্কুলটির সমন্বয়ক মো. মেহেদী হাসান বার্তা২৪.কম-কে জানান, ‘সঠিক নিয়মে লেখাপড়ায় গুরুত্ব না দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের প্রতি এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হয়। এতে তারা ভীতিগ্রস্ত হয়। পড়ালেখায় আনন্দ আছে। তারা যেন সে আনন্দ খুঁজে পায়, সেটি ফিরিয়ে আনতে এ উদ্যোগ নিয়েছি।’

জুম বাংলাদেশ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এসটি শাহীন প্রধান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এখানে যারা পাঠদান করছেন, তারা সবাই বিনা খরচে অর্থাৎ স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন। কেউ শিক্ষার্থী আবার অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। নিজেদের অর্থ দিয়ে শিশুদের বই-খাতা কিনে দিচ্ছি। সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই কাজগুলো করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হলো সুবিধাবঞ্চিত, পথশিশু ও ছিন্নমূল শিশুরা যাতে অপরাধের দিকে পা না বাড়ায়। তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসা। তাই স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে শিশুদের পাঠদান করছি।’

তিনি জানান, জুম বাংলাদেশের বর্তমানে পাঁচটি শাখা, ঢাকায় চারটি ও গাইবান্ধায় একটি (সেগুনবাগিচা, হাতিরঝিল, হাইকোর্ট, শহীদ মিনার ও গাইবান্ধা)। মোট ছাত্র-ছাত্রী চার শতাধিক। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল শিক্ষার্থী ও তরুণদের উদ্যোগে গড়ে তোলা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এভারগ্রীন জুম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর