নাটোরবাসীর সাধ্যের ফল ‘বাঙ্গি’

নাটোর, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নাটোর | 2023-08-26 12:27:24

মধুমাস জ্যৈষ্ঠের এক সপ্তাহ পার হলেও নাটোরের বাজারে নেই আম। একমাত্র ফল হিসেবে লিচুর দামও আকাশচুম্বী। কেজি দরে বিক্রি হওয়া তরমুজও নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। মধুমাসের স্বাদ নেওয়ার আয়োজনে হিমসিম খাওয়া নাটোরবাসীর সাধ্যের ফল এখন শুধুই বাঙ্গি।

মৌসুমের শুরু থেকেই নাটোরে ছোট, বড় ও মাঝারি ধরনের বাঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। দামও সস্তা। প্রতি পিস ১০ টাকা থেকে শুরু করে আকারভেদে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। ফলে যার যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই কিনে স্বাদ নিচ্ছেন বাঙ্গির।

প্রতিদিন শহরের স্টেশন বাজার, চকবৈদ্যনাথ, গুড়পট্টি, বড়গাছা বাজার, হাফরাস্তা, আলাইপুর, নীচাবাজার, মাদ্রাসামোড়, হরিশপুর, দত্তপাড়াসহ বিভিন্ন বাজার আর মোড়ে ভ্যানে চেপে বিক্রি হচ্ছে বাঙ্গি। ইফতারে তাই ফল হিসেবে কমবেশি সব শ্রেণির মানুষের টেবিলেই শোভা পাচ্ছে এ ফল।

বাঙ্গির খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, নাটোরসহ আশেপাশের বাজারগুলোতে বাঙ্গি আসে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে। ভোরের আলো ফোঁটার পরপরই স্থানীয় পাইকাররা ছুটে যান বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে। সেখান থেকেই সকালে সংগ্রহ করা হয় পাকা বাঙ্গি। সেগুলো দিনের অর্ধেকটা সময় বিক্রি শেষে আবার ফিরে যান এবং সংগ্রহ করেন কাঁচা ও আধাপাকা বাঙ্গি। রাতভর পেকে পরদিন সকাল থেকেই শহরের বাজারগুলোতে মেলে সুস্বাদু বাঙ্গি।

চাষিদের মতে, বাঙ্গি চাষের জন্য আলাদা করে জমির প্রয়োজন হয় না। রসুনের জমিতেই বাঙ্গির বীজ বপন করতে হয়। রসুন উঠে যাওয়ার পরই বাঙ্গির গাছ ছড়িয়ে পড়ে ক্ষেতে। সেই সময়ে সামান্য সেচ, সার-কীটনাশক দিলেই গাছে গাছে ফুল ও ফল ধরতে শুরু করে। রসুনের সাথী ফসল হিসেবে এখানে বাঙ্গির পাশাপাশি তরমুজের আবাদ হলেও তা পরিমাণে অনেক কম। রসুনের জমিতে বাঙ্গির আবাদ কমিয়েছে চাষির খরচ ও শ্রম।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/May/24/1558695451640.jpg

শুারুদাসপুর থেকে ভ্যানে বিভিন্ন সাইজের ৬০টি বাঙ্গি এনে শহরের মাদরাসামোড়ে বিক্রি করছিলেন মনসুর আলী। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাঙ্গির চাহিদা বেশি। তবে ছুটির দিন হওয়ায় বিক্রি কম হচ্ছে। অন্যদিনে অর্ধেক বেলায় সব বাঙ্গি শেষ।’

আনসার আলী নামের স্টেশন বাজার এলাকার এক ক্রেতা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এক কেজি তরমুজের দাম ৫০ টাকা। ২৫০-৩০০ টাকার নিচে একপিস তরমুজ কিনতে পাওয়া যায় না। অপরদিকে লিচুর দাম ২০০ টাকা। এই অবস্থায় বাঙ্গিই একমাত্র দেশি ফল, যা কিনে খেতে পারি।’

নাটোর কেন্দ্রীয় মসজিদ মার্কেটের সামনে আবুল কালাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে সস্তা বলতে একমাত্র বাঙ্গিই আছে। এক হালি কলার দামে প্রায় এক কেজি সাইজের একটি বাঙ্গি পাওয়া যায়। সে হিসেবে বাঙ্গিই লাভজনক।’

অপর ক্রেতা রশিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাঙ্গির জুস কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য উপকারী। কিনতে দরাদরী করার প্রয়োজন হয় না। অন্য ফলের দাম বেশি। তাই বাঙ্গি কিনি।’

ফলিক এসিডে পরিপূর্ণ বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ রয়েছে। ফলিক এসিড রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। ১০০ গ্রাম বাঙ্গিতে ৩৪ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া কোলেস্টোরেলমুক্ত হওয়ায় খাদ্য হিসেবেও নিরাপদ বাঙ্গি।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রায় বিনা খরচে রসুনের জমিতে বাঙ্গি চাষ সম্ভব হওয়ায় কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই উপকৃত হচ্ছে। দিনদিন বাঙ্গি চাষের পরিধি বাড়ছে। কম দামে বাজারে মেলায় সকলের ক্রয়ক্ষমতায় এখন পুষ্টিগুণসম্পন্ন মৌসুমী এ ফল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর