সাগরে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ: উপার্জন বন্ধ স্বহচরির

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কক্সবাজার | 2023-08-25 16:37:13

বয়বৃদ্ধ স্বহচরি দাশ। কক্সবাজারের ফিশারিঘাটে মাছ বিক্রির কাজ করে চলতো তার সংসার। কিন্তু সাগরে মাছ আহরণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিপাকে স্বহচরিসহ অনেকে। কারণ এখন ঘাটের আর মাছের বোট আসে না। তাই উপার্জনও বন্ধ। ফলে না খেয়েই দিন পার করছেন স্বহচরি ও তার মতো হাজার হাজার মৎস্য শ্রমিক।

সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক মাছ আহরণের ওপর ৬৫ দিনের (২০ মে থেকে ২৩ জুলাই) নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।

এরই প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ‘সদর উপজেলা নারী ঐক্যজোট’ নামের একটি সংগঠন। সেখানেই সড়কের পাশে বসে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছিলেন স্বহচরি।

জেলেদের মানবন্ধন, ছবি: সংগৃহীত

 

জানা গেছে, কয়েক বছর আগে স্বহচরি দাশের স্বামী শিশু কুমার দাশ মারা যান। এরপর থেকে এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে ফিশারিতে অন্যের মাছ বিক্রি করে দেয়ার কাজ করেন তিনি। সেখানের উপার্জন দিয়েই তার সংসার চলে।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলংকাসহ সবদেশে বছরে ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। কারণ এই সময়ে মা মাছ পোনা ছাড়ে ও অন্যান্য মাছও বড় হয়। তাই এই সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে পরবর্তীতে জেলেরাই লাভবান হবেন। তাছাড়া সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ বিলুপ্তের কথা বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সাগরে মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞায় প্রায় অর্ধ লাখ জেলের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তারা অনেকটা না খেয়েই দিন পার করছেন। শুধু জেলেই নয় শ্রমিকসহ আরও অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। তাই নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে ৩০ দিন করার দাবি জানিয়েছেন জেলে ও সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি মে থেকে জুলাই মাসের পরিবর্তে এ নিষেধাজ্ঞা চৈত্র থেকে বৈশাখ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

অসুস্থ শরীর নিয়েও মানববন্ধনে এসেছেন স্বহচরি, ছবি: বার্তা২৪

 

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকালে স্বহচরি দাশ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এক যুগ ধরে ঘাটে অন্যের মাছ বিক্রির কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। এত বড় সঙ্কট কখনও হয়নি। নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিন কিভাবে পার করব সেটা আমি জানি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা কমানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। কারণ মাছ আহরণ শুরু না হলে সংসার চলবে না।’

মৎস্যকর্মী দিলরাজ বেগম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ফিশারিতে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চলতো। কিন্তু এটাও বন্ধ হয়ে গেল। এতোদিন কিভাবে পার করব জানি না। তাই নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।’

বিউটি দাশ নামে এক মৎস্য শ্রমিক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘স্বামী অসুস্থ তাই মাছের আড়তে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় কাজ করতে পারছি না। আমরা ভাগ্যের কাছে বারবার হেরে যাচ্ছি।’

কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে গত ২০ মে থেকে অধিকাংশ মাছ ধরার ট্রলার কূলে ফিরে এসেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তে অর্ধ লাখ জেলে ও শ্রমিক বেকার হয়ে গেছেন। তাই এ নিষেধাজ্ঞা আরও শিথিল করা প্রয়োজন।’

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর