টাকা না দিলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি!

লালমনিরহাট, দেশের খবর

নিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট | 2023-09-01 00:40:22

লালমনিরহাটের সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রি কলেজের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অকৃতকার্য করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ আছে, ওই শিক্ষক টাকা ছাড়া শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষার খাতা সই করছেন না। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করলে তাকে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন তিনি।

জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রি কলেজ থেকে চলতি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২৩৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জন্য ১০০ নম্বরের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়। এ বিষয়ের পাস নম্বর ৩৩। যার ব্যবহারিকে রয়েছে ২৫ নম্বর। তাই ভালো ফল বা পাস করতে শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য বোর্ড থেকে খরচ বাবদ শিক্ষকদের জনপ্রতি ১৫ টাকা করে দেওয়া হয়।

আরও জানা গেছে, এসএসসি পরীক্ষার ব্যবহারিক পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। লিখত পরীক্ষা শেষ হওয়ায় কলেজগুলোতে শুরু হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা, যা চলতি মাসেই শেষ করতে হবে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রি কলেজের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক জালাল উদ্দিন শিক্ষার্থী প্রতি ৩০০ টাকা করে দাবি করেছেন। টাকা না দিলে তাকে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আর বাধ্যতামূলক এ বিষয়ে ফেল করিয়ে দিলে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করতে পারবেন না শিক্ষার্থীরা। তাই ভয়ে ও বাধ্য হয়ে টাকা দিচ্ছেন অনেকে।

অভিযোগ আছে, ওই কলেজে শুধু তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে নয় বিজ্ঞান বিভাগের সব বিষয় ও মনোবিজ্ঞান, ভূগোল ও কৃষির ব্যবহারিকের জন্যও নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। তবে শিক্ষকদের দাবি, পরীক্ষা কেন্দ্রে একটা খরচ আছে। তাই বিনারশিদে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে খরচ বাবদ অল্প কিছু টাকা নেওয়া হচ্ছে।

সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রী কলেজের একাধিক পরীক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে জানান, কেন্দ্র ফির অজুহাতে ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য শিক্ষকরা অতিরিক্ত টাকা নেন। প্রতিবাদ করলে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এসব টাকা শিক্ষক বা অফিস সহকারীদের মাধ্যমে আদায় করা হয়। টাকা না দিলে ব্যবহারিক খাতায় সই করেন না শিক্ষকরা।

সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রি কলেজের এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক লিমন মিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমার ছেলের তিনটি বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে এক হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এ ঘুষের টাকা যোগাতে আমাকে আড়াই মণ ধান বিক্রি করতে হয়েছে। টাকা না দিলে বা প্রতিবাদ করলে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন শিক্ষকরা। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

কলেজের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে জানান, শুধুমাত্র লালমনিরহাট সরকারি কলেজ ব্যতীত জেলার অধিকাংশ কলেজে ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে টাকা আদায় করেছেন শিক্ষকরা। এ বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ, অন্যথায় মেধার মূল্যায়ন হবে না।

সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রি কলেজের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ের প্রভাষক জালাল উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘একটা পরীক্ষা নিতে কিছু খরচ হয় তাই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাত্র ৩০০ টাকা চাওয়া হয়েছে। সামান্য কয়েকজন দিয়েছেন। গরিব এলাকা সবাই টাকা দেয় না। কলেজ অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়েই টাকা নেওয়া হচ্ছে।’

সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সুদান চন্দ্র বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘গরিব এলাকা হিসেবে তার কলেজের অধিকাংশ পরীক্ষার্থী পরীক্ষার ফি দিতে পারে না। আর সেখানে ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার কথা তো ভাবাই যায় না। তবে কেন্দ্রের কিছু খরচের জন্য চাপ দিয়ে নয়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা হয়তো কৌশলে কিছু আদায় করছেন। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

এ সময় তিনি এ প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) জহুরুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘পরীক্ষা কেন্দ্রের খরচ ফরম পূরণের সময় নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী শিক্ষাবোর্ড কেন্দ্রের খরচ বহন করে। ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য কোনো টাকা নেওয়া যাবে না। কেউ এমন করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর