পুরুষ শ্রমিক সংকটে ধান কাটছে নারী শ্রমিকরা

গাইবান্ধা, দেশের খবর

তোফায়েল হোসেন জাকির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, গাইবান্ধা | 2023-08-30 06:22:36

ধান নির্ভরশীল এলাকা হিসেবে পরিচিত গাইবান্ধা জেলা। এখন চলছে ইরি-বোরো ধানের ভরা মৌসুম। কৃষকের মাঠে দুলছে সোনালি স্বপ্ন।

ইতোমধ্যে বিআর-২৮ জাতের ধান কাটা-মাড়াই হয়েছে। এই অঞ্চলে ওই জাতের ধান কম চাষাবাদ হয়। চিকন ধান হিসেবে কৃষকরা যেটুকু আবাদ করেন তা দিয়ে শুধু খাদ্য মজুদ রাখা হয়। তবে বাজার জাতের জন্য উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) ধান চাষাবাদ বেশি লক্ষণীয়।

সম্প্রতি হাইব্রিড ধান কাটা শুরু হয়েছে। সকল কৃষকদের একযোগে ধান কাটায় দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। এ সংকট মোকাবেলায় মাঠে নেমেছেন নারী শ্রমিকরা। চুক্তিভিত্তিক ধান কর্তনে যোগ দিচ্ছেন নারীরা।

মঙ্গলবার (৭ মে) দুপুরে গাইবান্ধার কামারপাড়া এলাকায় গিয়ে নারী শ্রমিকদের ধান কাটতে দেখা গেছে। প্রখর রোদের ঝলকানি আর তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করেই ধান কাটছেন তারা। দম ফেলানোর সময় নেই তাদের।

কৃষাণী ফেলানি বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার অভাবের সংসার। স্বামীও একজন দিনমজুর। অন্যের জমিতে শ্রম দিয়ে সংসার চালাই। সংসারের টানাপড়েন থেকে রেহাই পেতে আমিও শ্রমিক হিসেবে কাজ করি।’

আরেক শ্রমিক তারাভানু বেগম বার্তা২৪.কমকে জানান, অভাব অনটনের সংসার। দুবেলা খাবারের জন্য অন্যের বাড়িতে শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করে আসছি। তবে কারও কাছে হাত পাতি না।

নারী শ্রমিক নেত্রী শরিফা বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কৃষকদের জমিতে দল ভিত্তিক কাজ করছি। ১০ জন মিলে একটি দল। চুক্তিতে ধান কাটা হচ্ছে। বিঘা প্রতি (৩৩ শতক) ধান কাটা ও মাড়াই দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা নেয়া হয়।’

প্রতিদিন দুই বিঘা ধান কেটে ৪/৫শ টাকা আয় করা যায়। তবে পুরুষ শ্রমিক দিয়ে ওই পরিমাণ ধান কাটতে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা দিতে হয় কৃষকদের।

ফলে নারী কৃষাণীদের সঙ্গে মজুরি বৈষম্য শিকারে ক্ষুব্ধ বলে তাদের অভিযোগ। বর্তমান সরকার নারীবান্ধব সরকার। নারীর বৈষম্য দূরীকরণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তারপরও কৃষাণীদের শ্রম মূল্যের পার্থক্য কেন? এমন প্রশ্ন রেখেছেন শরিফা বেগম।

সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়ার কৃষক আজিজুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, হাইব্রিড ধান পুরোদমে কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। সকল কৃষকের এক সাথে কাটা-মাড়াই শুরু হওয়ায় পুরুষ শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে নারী শ্রমিক দিয়ে ধান কর্তন করা হচ্ছে।

নারী শ্রমিকরা মজুরি বৈষম্যের শিকার এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়েরা মাঠের কাজে কম পারদর্শী। ১০ জন মহিলা যদি দুই বিঘা জমির ধান কাটেন, সেখানে পুরুষ কাটবেন অন্তত তিন বিঘা। এ জন্য নারী শ্রমিকদের মজুরি কম।

সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খাজানুর রহমান জানান, নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ইতোমধ্যে কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত ধান ঘরে তোলা শুরু করেছেন। গতবারের চেয়ে এবার আশানুরূপ ফলন পাবেন কুষকরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর