লোকসানের আশঙ্কা: সয়াবিন গাছে ছড়া কম, দানাও ছোট

লক্ষ্মীপুর, দেশের খবর

হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, লক্ষ্মীপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 05:44:44

দেশের সয়াবিনের প্রায় ৮০ ভাগ উৎপাদিত হয় লক্ষ্মীপুরে। এজন্য জেলার ব্র্যান্ডি নামও দেওয়া হয়েছে সয়াল্যান্ড। রবি মৌসুমেই এ ফসলের আবাদ করেন স্থানীয় কৃষকরা। ফলনও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তবে এবার চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে শেষ সময় পর্যন্ত হওয়া শিলা বৃষ্টির কারণে সয়াবিন গাছে ছড়া কম ও দানাগুলো ছোট হয়েছে বলে জানিয়েছে চাষিরা। এতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।

এদিকে, এ অঞ্চলে ফসল ভালো উৎপাদন হলেও সয়াবিন ভিত্তিক কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। এতে বাইরের আড়তদারদের কাছে সয়াবিন বিক্রি করে ভালো দাম পাননা এখানকার চাষিরা। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির সম্মুখীন ও ভালো দাম না পাওয়ায় লোকসান গুণতে হয় তাদের।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৮ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ৯ হাজার হেক্টর, রায়পুরে ৭ হাজার হেক্টর, রামগঞ্জে ৩৫ হেক্টর, রামগতি ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর ও কমলনগর উপজেলায় ১৪ হাজার ৮১০ হেক্টর।

জেলার ৫ উপজেলাতেই এখন সয়াবিন পাকা শুরু করেছে। গত কয়েকদিন থেকে সয়াবিন কাটায় ব্যস্ত সময়ও পার করছেন চাষিরা। তবে তারা সয়াবিনের ছড়া দেখে হতাশায় পড়েছেন। এমনকি সয়াবিনের ছোট ছোট দানাগুলোও তাদের স্বপ্নে আঘাত করেছে। আবহাওয়া ভালো থাকলেও চৈত্র মাসের মাঝামাঝি ও শেষের দিকের শিলা বৃষ্টিই এ দুর্দশার কারণ বলে জানা গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলের উর্বর মাটি সয়াবিন চাষের জন্য উপযোগী। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফলনে লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যায়। দেশের প্রায় ৮০ ভাগ সয়াবিন এ জেলার চাষিদের উৎপাদিত।

কয়েকজন কৃষক জানায়, প্রতিবছরই তারা সয়াবিন চাষ করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভাল ফলন হয়। কিন্তু এবার শিলাবৃষ্টিতে ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। একই কারণে গাছে ছড়া কম ধরেছে। সয়াবিনের দানাও ছোট আকৃতির হয়েছে। এতে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া লক্ষ্মীপুরের সয়াবিন প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো কারখানা নেই। অন্য জেলার আড়তদাররা এসে এখান থেকে কম দামে সয়াবিন কিনে নিয়ে যায়। এ কারণে এখানকার চাষিরাও সয়াবিনের ভালো দাম পায় না।

ভবানীগঞ্জ চরভূতা গ্রামের বর্গাচাষি লালবানু বলেন, ‘এবার সয়াবিন কম হয়েছে। এখন গৃহস্থদেরকেও (জমির মালিক) দেওয়া কষ্ট হয়ে যাবে। দুই-তিনবারের বৃষ্টিতে সব সার পানির সঙ্গে ধুয়ে চলে গেছে। এতে জমিতে আগাছা বেড়ে ফলন কম হয়েছে।’

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে জমিতে আগাছা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের খরচ বেশি হয়েছে। তবে হেক্টর প্রতি এক হাজার ৮০০ থেকে থেকে ২ হাজার কেজি সয়াবিন উৎপাদন হয়। এবার প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর