কলেজের ভেতর দিয়ে টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক মহাসড়ক!

টাঙ্গাইল, দেশের খবর

অভিজিৎ ঘোষ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, টাঙ্গাইল, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 22:57:15

টাঙ্গাইলের সরকারি মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজের ভেতর দিয়ে চলে গেছে টাঙ্গাইল-আরিচা আঞ্চলিক মহাসড়ক। সড়কটি কলেজ ক্যাম্পাসকে তিন ভাগে ভাগ করে রেখেছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাসে চলাচল করতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

দীর্ঘদিন ধরে কলেজের মোড় থেকে পশ্চিমদিক দিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে কলেজ কতৃপক্ষ। এ দাবি বাস্তবায়িত হলে কলেজের পরিবেশ যেমন রক্ষা হবে, তেমনি যানবাহন চলাচলেও সুবিধা হবে। তবে এখনো এর কোনো প্রতিকার নেই।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৭ সালের ১ জুলাই মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী টাঙ্গাইল শহর থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যখন কাগমারীতে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন গ্রামের মানুষ কলেজের ভেতর দিয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতো। পায়ে হাঁটা সেই সড়কের দু’পাশে বিভিন্ন সময় গড়ে উঠে কলেজের স্থাপনা। পাশাপাশি সড়কটিও ব্যস্ত হতে থাকে। ১৯৭৫ সালের মার্চে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে এসে কলেজটি জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। বর্তমানে কলেজটিতে ১৫টি বিভাগে সম্মান, দুইটি বিভাগে স্নাতকোত্তর, স্নাতক পাস ও এইচএসসি শ্রেণিতে নয় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।

৭০ দশকে কলেজের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তাটিতে ইট বিছানো হয়। ৮০’র দশকে এটি পাকা করা হয়। তখন এটি টাঙ্গাইল-নাগরপুর সড়ক ছিল। ৯০ দশকে সড়কটি নাগরপুর থেকে আরিচা পর্যন্ত পাকাকরণের মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইল-আরিচা আঞ্চলিক সড়কে রূপান্তর করা হয়। পরবর্তীতে ধলেশ্বরী নদীতে সেতু নির্মাণের পর এ সড়কের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন মালবাহী ট্রাক, বাসসহ কয়েকশ সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালাচল করে। ফলে এটি একটি ব্যস্ততম সড়কে রূপ নিয়েছে। কলেজের ভেতর দিয়ে এত বেশি যানবাহন চলাচল করায় ব্যহত হচ্ছে লেখাপড়ার পরিবেশ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সড়কটি টাঙ্গাইল শহর থেকে কাগমারী-সন্তোষ মোড় পর্যন্ত গিয়ে পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে কলেজের দিকে প্রবেশ করেছে। পূর্ব দিকের ২০০ গজ গিয়ে আবার বাঁক নিয়েছে দক্ষিণ দিকে। এর পর চলে গেছে আরিচার দিকে। এই সড়কের উত্তর দিকে পড়েছে কলেজের প্রশাসনিক ও একাডেমিক মূল ভবন। পশ্চিম দিকে সমাজ কর্ম, অর্থনীতি, ইসলামের ইতিহাস, জামে মসজিদ ও পুকুর আবার পূর্ব দিকে উচ্চ মাধ্যমিক ক্যাম্পাস, ছাত্র সংসদ, ছাত্রদের কমন রুম, ক্যান্টিন ও শিক্ষকদের মেস।

কলেজের ছাত্র আবু রায়হান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এ কলেজে শান্তিতে চলাচল করা যায় না। মনে হয় কলেজ নয়, মহাসড়ক দিয়ে হাঁটছি।’

কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল হুদা বার্তা২৪.কমকে জানান, তিনি এ কলেজে অধ্যক্ষ থাকাকালে ২০০৪ সালে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সড়কটি কলেজ বাইপাস করে নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। তার আগে এবং পরেও কলেজ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে।

কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) শফিউল আলম মুকুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে বেপরোয়াভাবে যানবাহন চলাচল করে। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। বিভিন্ন সময় মন্ত্রীরা কলেজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আসলে তাদের কাছে সড়কটি কলেজের সীমানার বাইরে দিয়ে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তারা আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’

কলেজের শিক্ষকরা বার্তা২৪.কমকে জানান, সড়কটি যেখান থেকে (কাগমারী সন্তোষ মোড়) পশ্চিম দিকে মোড় নিয়ে কলেজে ঢুকেছে সেই মোড় থেকে আধাকিলোমিটার বাইপাস করে দিলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। এতে কলেজের পরিবেশ যেমন রক্ষা হবে, তেমনি সড়কটিও সোজা হবে। এতে যানবাহন চলাচলে সুবিধা হবে।

কলেজের অধ্যক্ষ হিমাংশু কুমার আচার্য্য বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এই সড়কটির কারণে পুরো ক্যাম্পাস এক করা যাচ্ছে না। ফলে পরীক্ষা পরিচালনাসহ অন্যান্য কাজ ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিমুল এহসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘টাঙ্গাইল-আরিচা সড়কটি প্রসস্তকরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ প্রস্তাবে মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজের দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ থেকেই সড়কটি ঢাকা সড়কের আশেকপুরে সংযোগ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে কলেজের সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।’

প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে জমা আছে বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর