লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের একটি সয়াবিন ক্ষেত থেকে আগুনে দগ্ধ অবস্থায় শাহেনূর আক্তার (২৪) নামে এক তরুণীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই তরুণীর অভিযোগ- স্ত্রীর স্বীকৃতি চাওয়ায় স্বামী সালাউদ্দিন তার শরীরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
এদিকে কমলনগর থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা, ওই তরুণী বাজার থেকে কেরোসিন এনে সয়াবিন ক্ষেতে গিয়ে নিজের শরীরে নিজে আগুন দিয়েছে।
খবর পেয়ে রোববার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সফিউজ্জামান ভূঁইয়া ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন সদর হাসপাতালে ওই তরুণীকে দেখতে গিয়েছিলেন।
এর আগে বিকেলে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের আইয়ুবনগর এলাকায় একটি সয়াবিন ক্ষেত থেকে দগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফিজ উল্লাহ ও গ্রাম পুলিশ আবু তাহের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করে।
অন্যদিকে শাহেনূরের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করেছে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আনোয়ার হোসেন। আগুনে ওই তরুণীর মুখ-হাতসহ শরীরের প্রায় ৪০ ভাগ পুড়ে গেছে।
শাহেনূর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সোনাগাজি গ্রামের জাফর আলমের মেয়ে।
জানা গেছে, সালাউদ্দিন স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের আইয়ুবনগর এলাকায় বসবাস করছে। সালাউদ্দিন পেশায় রিকশা চালক। তার বাবার নাম মহর আলী।
চিকিৎসাধীন দগ্ধ তরুণী শাহেনূর জানান, মোবাইলে সালাউদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে প্রায় দেড় বছর আগে কাজী অফিসে তাদের বিয়ে হয়। ৬ মাস আগে তিনি জেনেছেন সালাউদ্দিন বিবাহিত। এরপর স্ত্রীর স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কিছুদিন আগে কমলনগরে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু স্ত্রীর স্বীকৃতি পাননি। ফের শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) আবার লক্ষ্মীপুরে আসেন। কিন্তু এবারো স্ত্রীর স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। স্ত্রীর স্বীকৃতি চাওয়ায় তার শরীরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে সালাউদ্দিন।
এ বিষয়ে জানতে সালাউদ্দিনের মোবাইলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোন করেও সাড়া মেলেনি।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার হাফিজ উল্লাহ জানান, বিয়ের কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য ওই তরুণীকে রিকশা করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তিনি জানতে পারেন ওই তরুণী দগ্ধ অবস্থায় সালাউদ্দিনের বাড়ির পাশে একটি সয়াবিন ক্ষেতে পড়ে আছে। এ সময় তার পাশে কেরোসিনের বোতল, দিয়াশলাইয়ের বক্স, জুতা, ব্যাগ ও পুড়ে যাওয়া ওড়না পড়ে ছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রাম পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আনোয়ার হোসেন জানান, দগ্ধ তরুণীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।
কমলনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেন জানান, ওই তরুণীর ব্যাগ থেকে কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া গেছে। তিনি কেরোসিন নিজেই বহন করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি নিজের শরীরে নিজেই আগুন লাগিয়েছেন। তবে সত্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে ডাকা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাটি জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।