নাসিরনগরে মেলায় পণ্যের বিনিময়ে মিলছে শুটকি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 17:03:53

চিরাচরিত বাংলা পঞ্জিকার নিয়ম অনুযায়ী জেলার নাসিরনগরের কুলিকুন্ডা গ্রামে বসেছে প্রায় দুইশ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী শুঁটকির মেলা। ব্যতিক্রমধর্মী এ মেলা দেখতে ও নানা রকমের শুঁটকি কিনতে কুলিকুন্ডায় ভিড় করেছেন শত শত ভোজন রসিক লোকজন। টাকা বা কৃষিপণ্যের বিনিময়ে নিয়ে যাচ্ছেন পছন্দের শুঁটকি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় দুইশতাধিক দোকান বসেছে নানান জাতের শুঁটকি নিয়ে। আধুনিক সভ্যতার আগে থেকেই বিনিময় প্রথা চালু ছিল। সেই বিনিময় প্রথার ধারাবাহিকতায় জেলার নাসিরনগরের কুলিকুন্ডা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে চলে পণ্যের বিনিময়ে পণ্যের বেচাকেনা। কেউ আসেন ধান নিয়ে, আবার কেউ সরিষা। এসব দেয়ার মাধ্যমে তারা নিবেন শুটকি। কি পরিমাণ শুটকি দেয়া হবে সেটা নিয়ে এখানে চলে দর কষাকষি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় এই পণ্যের বিনিময়ে পণ্য দেয়ার বাজারের কার্যক্রম।

এই মেলাকে কেন্দ্র করে নাসিরনগর ও আশেপাশের এলাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ীরা এসেছেন শুঁটকি নিয়ে। এসব শুটকির মধ্যে রয়েছে বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, পুঁটি, কাচকি, চিংড়ি, টেংরাসহ নানা জাতের দেশীয় মাছের শুঁটকি।

এছাড়াও ছুড়ি, লইট্টাসহ সামুদ্রিক মাছের শুঁটকির পাশাপাশি রয়েছে ইলিশের নোনা ডিম ও কার্প জাতীয় মাছের ডিমের শুঁটকিও। ভোজন রসিকরা তাদের শুটকির চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন এই মেলায়। তারা তাদের চাহিদামত কিনে নিচ্ছেন নানান জাতের শুটকি।

 

জেলার সরাইল থেকে মেলায় শুটকি কিনতে আসা ক্রেতা মো. মোবারক মিয়া জানান,  প্রতি বছরই আমরা এই দিনটির জণ্য অপেক্ষায় থাকি। বাংলা পঞ্জিকার হিসেব অনুযায়ী পহেলা বৈশাখে এই মেলা শুরু হয়। সকাল থেকে শুরু হয়ে মেলা চলে পরের দিন বিকাল পর্যন্ত।

শুটকি ব্যবসায়ী সচিন্দ্র দাশ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি আমার বাবার সঙ্গে এই মেলায় শুটকির দোকান নিয়ে আসছি। বাবার মুখে শুনেছি তিনিও তার বাবার সঙ্গে এই মেলায় এসেছেন।

আরেক শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. সিরাজ মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, সকাল থেকে স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত চাল, আলু, সরিষা, পেঁয়াজ রসুন, আমসহ নানা পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি কিনে নেন। নগদ টাকার বিনিময়েও শুঁটকি কেনা-বেচা হয়।

মেলা তদারকির দায়িত্বে থাকা মো. ইকবাল চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, এই মেলা ঠিক কত বছর আগে শুরু হয়েছে তা কেউ বলতে পারে না। মেলাটি সম্পূর্ণ ইজারা মুক্ত। কোনো ব্যবসায়ী যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে আমাদের লোকজন নজরদারি করেন। এই মেলায় এখনো পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

নাসিরনগর উপজেলা সহকারি মৎস কর্মকর্তা দেওয়ান মো. নজরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, মেলায় আসা প্রত্যেকটি শুটকি অত্যন্ত মানসম্পন্ন।এসব শুটকিতে কোনো প্রকার বিষাক্ত কেমিক্যাল নেই। যার কারণে এখানের শুটকি নিতে মানুষ দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর