বিলুপ্তির পথে কুমারখালীর তাঁতশিল্প

কুষ্টিয়া, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, কুষ্টিয়া, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 00:30:16

কালের বিবর্তনে প্রায় বিলুপ্তির পথে কুমারখালীর তাঁতশিল্প। আগে সেখানকার তাঁতপল্লীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টাকুর-টুকুর শব্দ হলেও এখন নেই কোনো কর্মমুখরতা। মাঝে মাঝে কয়েকটি তাঁতকল চললেও সেই জৌলুস আর নেই। যারা এখনো তাঁতকল আঁকড়ে আছেন তাদের সংসার চালানোই কষ্টকর। ফলে পেটের দায়ে পূর্বপুরুষের এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।

উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, বাঁশগ্রামসহ কয়েকটি ইউনিয়ন জুড়েই ছিল তাঁতী ও তাঁতশিল্প। তাঁতের ছন্দে দোলায়িত হতো এসব গ্রামের মানুষ। বর্তমান নানা প্রতিকূলতায় এসব ইউনিয়নের তাঁতশিল্প বিলুপ্তির পথে। প্রতি বছরই কমছে তাঁতকলের সংখ্যা। যদুবয়রা গ্রামের প্রায় এক হাজার তাঁতের মধ্যে এখন আছে মাত্র একশটি। এই শিল্পের সঙ্গে প্রায় চার হাজার নারী ও পুরুষ জড়িত ছিলেন। যারা এখন বেশিরভাগ কর্মহীন ও বেকার।

জানা গেছে, পুঁজি সংকট, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বন্ধ হচ্ছে তাঁতকলগুলো। ফলে পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক মালিক ও কারিগররা।

প্রবীণ তাঁতী আশরাফ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সর্বাধুনিক মেশিনে পোশাক তৈরি হওয়ায় আমাদের তাঁতের তৈরি পোশাক মার খাচ্ছে। ফলে হাজার হাজার তাঁতী পেশা বদল করে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন।’

অপর তাঁতী সবুজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আগের মতো বাজার না থাকায় তাঁতী পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছি।’

কুষ্টিয়া জেলা তাঁতী লীগের সদস্য সচিব হাজী হারুন-অর-রশিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আধুনিক মেশিন সংযোজন করতে হবে। ফলে এই শিল্পের জন্য সরকারকে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই তাঁতশিল্পকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।’

তাঁত বোর্ডের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তাঁতশিল্প নগরী খ্যাত কুষ্টিয়ার কুমারখালী, খোকসা ও মিরপুর উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজারেরও অধিক তাঁতকল ছিল। এরমধ্যে হস্তচালিত ছিল ৪৪ হাজার এবং বিদ্যুৎ চালিত ছিল এক হাজার। প্রতি বছর ২৬০ কোটি টাকা মূল্যের কাপড় তৈরি হতো এ জেলায়। যার মধ্যে ২ কোটি ৮৮ লাখ পিস লুঙ্গি, ১৫ লাখ পিস বেডসিট, ৭২ লাখ পিস গামছা ও তোয়ালে উৎপাদন করা হতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাপড়ের রং, ক্যামিক্যাল ও সুতার মূল্য বৃদ্ধির কারণে তাঁতের তৈরি কাপড়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাছাড়া মেশিনের তৈরি নানাবিধ পণ্য বাজারে আসায় দেশি কাপড়ের চাহিদা কমে গেছে। ফলে অচল হয়ে যাচ্ছে তাঁতকলগুলো। আর এ পেশায় জড়িতরা বর্তমানে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। তবে তাঁতশিল্পকে বাঁচাতে আমরা তাঁতীদের সঙ্গে বৈঠক করছি। সরকারের সহযোগিতায় বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে এই শিল্প টিকে থাকে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর