ফের সংঘর্ষ প্রবণ হয়ে উঠেছে শৈলকুপা!

ঝিনাইদহ, দেশের খবর

সোহাগ আলী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, ঝিনাইদহ, বার্তা ২৪.কম | 2023-09-01 17:36:06

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহ। জেলার কুষ্টিয়া, মাগুরা ও রাজবাড়ী সীমান্তে অবস্থিত শৈলকুপা উপজেলা। স্বাধীনতার পর থেকে সংঘর্ষ প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত শৈলকুপা। এখানে যেমন শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেশি তেমনি আবেগপ্রবণ এ এলাকার মানুষ। দেশের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যাও বেশি এ উপজেলায়।

গত ১০ বছরে এ উপজেলায় সংঘর্ষ তেমন একটা ঘটেনি। কিন্তু উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে যেন পুরোনো চেহারায় ফিরেছেন এলাকার মানুষ। নির্বাচনের আগে ও পরের কয়েকদিন সহিংসতা যেন কমানো যাচ্ছে না। তীব্র হয়েছে আওয়ামী লীগের মধ্যেই বিভক্তিও; চলছে সহিংসতা।

নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নায়েব আলী জোয়াদ্দার দলের মনোনয়ন পান। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনা। এ কারণে দলের নেতাকর্মীরা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে রেষারেষি ও শত্রুতা।

দলের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আরিফ মন্নু নৌকা প্রতীকে প্রার্থীর সমর্থন করেন। তার সাথে ছিলেন শৈলকুপা পৌর কমিটির সভাপতি ও পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম। দলের ইউপি চেয়ারম্যানগণ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। অংঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ ও মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচারণা শুরু করেন। নেতাকর্মীর মধ্যে একে অপরের প্রতিহিংসাত বিদ্বেষ চলতে থাকে। নির্বাচনের আগে ছোট খাটো দুই একটি সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনা জয়ী হন। এরপর উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। চলতে থাকে বাড়িঘরে হামরা, ভাংচুর ও মারপিট।

ভোট শেষে রাতেই দোহা নাগিরাট গ্রামে নৌকা সমর্থক তিন জনের বাড়িতে হামলা চালাই সতন্ত্র আনারস প্রতিকের সমর্থক লোকজন। তারা ব্যাপক ভাংচুর করে। বগুড়া গ্রামে নৌকা সমর্থক আবু মিয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। পরের দিন পাঁচপাখিয়া গ্রামে পাঁচটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। গত ২৫ মার্চ গবিন্দপুর গ্রামে নৌকা সমর্থক তিনটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে এক শিশুসহ পাঁচজনকে হাতুরি পিটিয়ে আহত করা হয়। ওই দিনই উপজেলার ধর্মপাড়া গ্রামে নৌকা সমর্থকদের ১০টি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়, তুলে নেওয়া হয় মাঠের ফসল।

২৬ মার্চ রুপদা গ্রামে নৌকা সমর্থক পাঁচজনকে কুপিয়ে আহত কর হয়। ২৭ মার্চ ভুলুন্দিয়া গ্রামে নিয়ামত আলীকে পিটিয়ে আহত করে আনারস প্রতীকের সমর্থকরা। রাতে তার বাড়ি থেকে একটি খাশি ছাগল লুট করা হয়। তার বাড়ির সমনে ওই ছাগল জবেহ করে ভুড়িভোজ করে। উপজেলার পুটিমারি গ্রামে কয়েক জনের বাড়িঘরে হামলা ও বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়।

ধর্মপাড়া গ্রামের কয়েকজন বলেন, ভোটের দিন রাত থেকেই তাদের উপর অথ্যচার শুরু হয়। কেউ কেউ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। মাঠে থাকা পেয়াজ উঠাতে দিচ্ছে না।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুপদা গ্রামের কাজী তোয়াজ উদ্দীন অভিযোগ করেন, তারা আওয়ামী লীগ করে এবং নৌকায় ভোট দিয়েছে এজন্য আনারস সমর্থরা বাড়িতে ঢুকে তাকে তার ছেলে সাইদুর কাজীকে ও নাতনি শিলাকে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে।

ক্ষোভের সাথে তিনি বলেন, এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, তবুও নৌকায় ভোট দিয়ে মার খেতে হচ্ছে, এরপর তারা আর আওয়ামী লীগ দল করবে না।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) আবু তাহের বলেন, নির্বাচনের আগে ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে শৈলকুপায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাথী সমর্থকদের মাঝে যে মারামারি ভাংচুর চলছে, তা কোনো সভ্য মানুষের কাম্য নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী একত্রে বসে এ সমস্যা মিটিয়ে ফেলবে। প্রয়োজনে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই সহিংসতায় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, সহিংসতা বন্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। যারা অশান্তির সাথে জড়িত তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথের উদ্যোগে বিশেষ আইন শৃংখলা বিষয়ক সভা করা হয়েছে। সহিংসতার সাথে জড়িতদে কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি দেওয়া হেয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর