পিঠে একাত্তরের বুলেট নিয়ে আজও বেঁচে আছেন সালেহা

নেত্রকোনা, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, নেত্রকোনা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 11:41:43

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এলাকার যোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছিলেন শিশু সালেহা আক্তার। এক পর্যায়ে পিঠে বুলেটবিদ্ধও হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় তাকে চিকিৎসা করানো হলেও অপসারণ করা হয়নি সেই বুলেটটি। ফলে পিঠে বিদ্ধ হওয়া সেই বুলেট নিয়ে আজও বেঁচে আছেন। কিন্তু এখনো এই নারীর ভাগ্যে জোটেনি কোনো স্বীকৃতি।

নেত্রকোনার মদন উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের আব্দুর রহিম কাঁচু মিয়ার মেয়ে এই সালেহা আক্তার। জেলা শহরের বর্তমান কুরপাড় নিবাসী লক্ষীগঞ্জ ইউনিয়নের বাইশধার গ্রামের নুরুল হকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বর্তমানে বয়স ষাট বছর। তার চার ছেলে ও এক মেয়ে। প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন সেই বুলেটের কথা। কিন্তু পিঠে যখন তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় তখন মনে করিয়ে দেয় সেই ভয়াল যুদ্ধের কথা।

যুদ্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে সালেহা আক্তার বার্তা২৪.কমকে জানান, ১৯৭১ সালে মদন উপজেলা মুক্ত হওয়ার আগে টানা ১৭২ ঘণ্টার যুদ্ধ হয়েছিল থেমে থেমে। ৩০ অক্টোবর রাত থেকে শুরু হয়ে যুদ্ধ চলে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত। বাজিতপুর গ্রামসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বিভিন্ন বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা থাকতেন। তখন নারী মুক্তিযোদ্ধা মিরাশির সঙ্গে সহচর ছিলেন সালেহা। তার কাজ ছিল থানার দিকে নজর রাখা এবং মিলিটারিদের চলাফেরার খবরাখবর মিরাশি ও এখলাছ আহমেদ কোরাইশিসহ অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয়া। এরই ধারাবাহিকতায় একদিন বাড়ির উঠানেই গুলিবিদ্ধ হন সালেহা। পরে সকলেই তাকে ভেতরে নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেন। কিন্তু গ্রামের মানুষ সেই গুলি আর বের করতে পারেননি। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার যন্ত্রণাও বাড়তে থাকে।

সালেহার বড় ছেলে মো. রাসেল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় শুনেছি মায়ের আহত হওয়ার গল্প। কিন্তু এখনো যে বুলেট আছে তা জানলাম ডাক্তারের কাছে গিয়ে। তাছাড়া নারীরা তো এমনিতেই অবহেলিত। তারা বড় বড় অবদান রাখলেও তা বেশি একটা সামনে আসে না। আমার মা মুক্তিযুদ্ধে এমন একটি স্মৃতি বহন করে আছে যার জন্য আমরা গর্বিত। আমাদের অর্থকড়ির অভাব নেই। কিন্তু আমরা চাই আমাদের মায়ের স্বীকৃতি।’

মুক্তিযুদ্ধ ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা এখলাছ আহমেদ কোরাইশি এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তখনকার দিনে সালেহা ছিল অত্যন্ত সাহসী একটি শিশু। আমি তাকে গালাগাল করতাম। যে তুমি এতো ছোট তারপরও কেনো আসো। নারী মুক্তিযোদ্ধা মিরাশির সঙ্গে সে আমাদেরকে দেখতে আসতো।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর