দেড় কোটি টাকার উপরে ব্যয়, তবে পানি নেই স্লুইস গেটে

মেহেরপুর, দেশের খবর

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মেহেরপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 23:45:21

পানি প্রবাহ না থাকলেও তা ধরে রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছে তিনটি স্লুইস গেট। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নাগদার খাল ও মুন্দাইল খালে দেড় কোটি টাকার উপরে ব্যয় করে এ স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়।

ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় গত দশ বছরে এ তিনটি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হলেও তা কোনো উপকারে আসছে না। শুষ্ক মৌসুমে খালে পানি না থাকা ও নাব্যতা সংকটে স্লুইস গেট তিনটি উপকারের বদলে অভিশাপে পরিণত হয়েছে।

অপরদিকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্লুইস গেটগুলোর যন্ত্রপাতিও বিকল হচ্ছে।

জানা গেছে, ষোলটাকা ও রাইপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে চলা মুন্দাইল খাল সংযুক্ত হয়েছে মড়কা নামক স্থানে নাগদার খালে। খাল দু’টির আশপাশে হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ক্ষেতের পানি নিষ্কাশন ও শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্য খাল দু’টিতে তিনটি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়।

মুন্দাইল খালে ২০১৭ সালে ৮৫ লাখ ৬১ হাজার ১১৯ টাকা ব্যয়ে একটি ও ২০০৮ সালে নাগদার খালের ওপর ৮৬ লাখ, ৮৯ হাজার ৯৩৮ টাকা ব্যয়ে দু’টি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। এলজিইডির ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প থেকে নির্মাণ করা হয়েছে এসব স্লুইস গেট। একই সময়ে খালের কিছু অংশ পুনঃখনন করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত খনন না হওয়ায় স্লুইস গেটগুলো এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না।

জুগিরগোফা গ্রামের কৃষক আশাদুল ইসলাম জানান, মুন্দাইল খাল পুনঃখনন ঠিকভাবে না হওয়ায় পানি থাকে না। খালটি ফের পুনঃখনন করা হলে এখানে সেচে ও দেশীয় মাছের আধার হতে পারে।

রাইপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক ইছার উদ্দীন বলেন, ‘মুন্দাইল খালে স্লুইস গেট নির্মাণ করায় আমার ও আশপাশের কৃষকদের জমির ক্ষতি হয়েছে। সুবিধার কথা বিবেচনা করে আমরা জমির কথা চিন্তা করিনি। কিন্তু খালে পানি না থাকায় স্লুইস গেট কোনো কাজে আসছে না। তাছাড়া সংরক্ষণের অভাবে যন্ত্রপাতি বিকল ও চুরি হচ্ছে।’

এলাকার বিভিন্ন কৃষক ও সচেতন মানুষ জানান, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়াই স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে। কিন্তু তা উপকারে আসছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডি গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী সেলিম চৌধুরী বলেন, ‘স্লুইস গেট নির্মাণের সময় আমি এখানে ছিলাম না। কয়েকমাস হলো যোগদান করেছি। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।’

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এখনো মেহেরপুর জেলার মাঠেঘাটে খালবিলে দেশীয় মাছ দেখা যায়। খাল-বিল ও নদী-নালা পুনঃখনন করা হলে দেশীয় মাছ দিয়েই এলাকার মানুষের চাহিদার বড় অংশ পূরণ করা সম্ভব। তাছাড়া পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা না থাকায় জলজপ্রাণী হুমকির মুখে। ধ্বংসের মুখে জীববৈচিত্র।

এ বিষয়ে মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, ‘এলাকার সব নদ-নদী ও জলাধার পুনঃখননের জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছি। ইতোমধ্যে ছেউটিয়া নদীর ১০ কিলোমিটার পুনঃখনন শুরু হয়েছে। অচিরেই কাজলা নদী পুনঃখনন শুরু হবে।’ তবে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর