১৫ ঘণ্টার ব্যবধানে ২ সশস্ত্র হামলা, উত্তপ্ত রাঙামাটি

রাঙামাটি, দেশের খবর

আলমগীর মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, রাঙামাটি, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 13:50:46

বাঘাইছড়িতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন ছয়জন নির্বাচনী কর্মকর্তা ও গাড়ির এক হেলপার। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৫ ঘণ্টার ব্যবধানের বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ দুটি ঘটনায় স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায়সহ রাজনৈতিক অঙ্গণে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

নৃশংস সাত খুনের পর এখন থমথমে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি। ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিহতদের মরদেহের ময়নাতদন্ত চলছে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে। আহতদের মধ্যে চট্টগ্রাম সিএমএইচে দশজন এবং ঢাকায় সাতজনের চিকিৎসা চলছে। ঘটনায় জড়িতদের ধরতে চলছে অভিযান।

সেনা কর্মকর্তাদের ধারণা, এ ঘটনার সাথে জড়িত ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপ ও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি জেএসএস। এছাড়া এ নির্মম ঘটনার সার্বিক বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে তুলে আনতে ইতোমধ্যেই চট্টগ্রামস্থ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে একজন ডিডিএলজি’র নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নজরুল ইসলামকে নিয়ে মোট সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে পাহাড়ে সশস্ত্র সংঘাতে গত ১৫ মাসে অন্তত ৫৮ জন নিহত হয়েছেন। কয়েক বছর সমঝোতার ভিত্তিতে চললেও গত ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে পাহাড়ের দুই জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে আঞ্চলিক দলগুলো সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।

সোমবার (১৮ মার্চ) রাঙামাটির বাঘাইছড়ির নয় মাইল এলাকায় ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষে গাড়িতে করে ফেরার সময় নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ সাত জনকে ব্রাশ ফায়ার করে নিহত করে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল ৯টার সময় বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কুমার তংচঙ্গ্যাকে তার সন্তানের সামনে থেকে ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে জেএসএস নামধারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।

এদিকে পরপর দুটি বড় আকারের সশস্ত্র হামলায় আটজন মানুষকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায়সহ রাজনৈতিক অঙ্গণে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেভেন মার্ডারের ঘটনায় জড়িত আঞ্চলিকদলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ধরতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর সদস্যরা শিগগিরই সাঁড়াশি অভিযানে নামবে বলে জানিয়েছে সেনা কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে হতাহতদের পরিবার ও স্বজনদের সাথে দেখা করতে বাঘাইছড়িতে ছুটে যান রাঙামাটি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি থেকে রওনা হয়ে বাঘাইছড়ির ঘটনাস্থল নয়কিলো এলাকাটি সরেজমিনে পরিদর্শনসহ বাঘাইছড়ি উপজেলাবাসীর সাথে সাক্ষাত করেছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার আলমগীর কবির, আনসার ব্যাটালিয়ান পরিচালক আব্দুল আওয়ালসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এ সময় নিন্দা জানিয়ে এই নির্মম ঘটনার সাথে জড়িতদের অচিরেই আইনের আওতায় আনা হবে বলে হতাহতদের স্বজনদের আশ্বস্ত করেছেন তারা।

এদিকে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বাঘাইছড়ির নয়কিলো নামক স্থানটিসহ সন্ত্রাসীদের আধিপত্য থাকা এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ক্যাম্প বসানোর দাবি জানিয়েছে হতাহতদের স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে মতবিনিময় সভা শেষে নিহতদের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা ও আহতদেরকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করেন জেলা প্রশাসক।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে বাঘাইছড়ির ঘটনাস্থলের আশপাশে সবগুলো পাহাড়ি এলাকা ঘিরে ফেলে যৌথ বাহিনী। সকাল থেকে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছেন।

অপরদিকে জেএসএস ইউপিডিএফ‘র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনাসহ পাহাড়ের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে শিগগিরই চিরুনি অভিযান না চালালে লাগাতার হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বাঙালি সংগঠনগুলো। মঙ্গলবার রাঙামাটি শহরে এবং বাঘাইছড়ি উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশও করেছে তারা।

জানা গেছে, বাঘাইছড়িতে নিহত সাতজনের মধ্যে ছয়জনের মরদেহ খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। অপরদিকে ওই ঘটনায় আহত ১৭ জনের মধ্যে আশঙ্কাজনক সাতজনকে মঙ্গলবার সকালে ঢাকার সিএমএইচ-এ আনা হয়েছে। বাকি দশজন চট্টগ্রাম সিএমএইচ-এ চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে গঠিত সাত সদস্য বিশিষ্ট্য তদন্ত কমিটিতে যারা রয়েছেন তারা হলেন, ১. পরিচালক, স্থানীয় সরকার (অতিরিক্ত সচিব), চট্টগ্রাম বিভাগ, চট্টগ্রাম
২. ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত ডিআইজি পদ মর্যাদা)
৩. পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদ মর্যাদা)
৪. পরিচালক ও ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক, ৩০ আনসার ব্যাটালিয়ন, ফয়েজলেক, চট্টগ্রাম
৫. সেক্টর কমান্ডার, বিজিবি, সেক্টর সদর দফতর, রাঙামাটির প্রতিনিধি (মেজর পদ মর্যাদা)
৬. মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ
৭. বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, রাঙামাটিকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

এই কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যেই উক্ত ঘটনার কারণ ও করণীয় নির্ধারণ, ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে সুপারিশসহ তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর