একতারাতেই স্বাবলম্বী!

কুষ্টিয়া, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2023-08-25 11:28:09

বাউল গানের অন্যতম অনুষঙ্গ একতারা। এই একতারাকে কেন্দ্র করেই কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ির আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশকিছু কারখানা।

উৎপাদিত এসব একতারা রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। একতারা তৈরি করে এই এলাকার অন্তত দুই শতাধিক পরিবার জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। এই কুটির শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে বহু পরিবারেই।

বাউল সম্রাট ফকির লালনের দোল উৎসব উপলক্ষে আগামী ২০ মার্চ থেকে তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লালন উৎসবের। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে লাখো ভক্ত-সাধুদের পদচারণায় মুখর হবে গোটা লালন মাজার ও মাজার সংলগ্ন কয়েক কিলোমিটার এলাকা।

এ উপলক্ষে একতারা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানকার কারিগররা।

একতারা তৈরির মূল উপাদান বাঁশ, কাঠ আর চামড়া। তবে লাউয়ের খোল ও নারিকেলের মালাই দিয়েও তৈরি হয় একতারা।

মুলি বাঁশ মূলত পাশের জেলা ঝিনাইদহ ও যশোর থেকে সংগ্রহ করা হয়। লাউয়ের খোল স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে এবং চামড়া কেনা হয় নাটোর থেকে। উপজেলার ছেঁউড়িয়া, বিশ্বাসপাড়া, জয়নাবাদ এলাকার শত শত নারী-পুরুষ এই কাজ করে হয়ে উঠেছেন আত্মনির্ভরশীল।

ছেউড়িয়ার আখড়াবাড়ির আশপাশে প্রায় বাড়িতেই গড়ে উঠেছে একতারা কারখানা। এসব কারখানায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতুড়ি, বাটাল, কাঁচি দিয়ে কাজ করেন একতারা কারিগররা। এক একটি কারখানায় প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০টি একতারা তৈরি হয়। প্রতিটি একতারার দাম ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। তবে অর্ডারে তৈরি করলে দাম হাজার ছাড়িয়ে যায়।

একতারা তৈরি করে স্বাবলম্বী ছেঁউড়িয়ার একতারা বাজারের রবিউল ইসলাম জানান, এক যুগ আগে ছেঁউড়িয়ায় গড়ে তোলেন ‘একতারা বাড়ি’ নামে একটি কারখানা।

মাত্র দুই হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে বাড়িতেই একতারা তৈরি শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকলে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার ‘একতারা বাজার'’ কারখানায় এখন প্রায় ২০ জন কর্মচারী কাজ করেন। তাদের হাতের নিপুণ দক্ষতায় তৈরি হচ্ছে ছোট-বড় নানা আকৃতি ও ডিজাইনের একতারা।

একতারা বাড়ির মালিক আমিরুল ইসলাম বাদশা জানান, একতারা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হয় তরলা বাঁশ, লাউয়ের খোল, মেহগনি কাঠের তৈরি ছোট-বড় সাইজের খোল, নারিকেলের মালাই, ছাগলের চামড়া, স্টিলপাত ও সুরের তার। এ ছাড়া প্রয়োজন হয় স্ক্রু, ওয়াসার, বোতাম ও রং।

একতারা বাজারের কারখানায় কর্মরত আবুল হাসান বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি এই কারখানায় প্রায় এক বছর ধরে কাজ করছি। এখানে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসারে সহযোগিতা করতে পারি’।

একই কারখানায় কর্মরত আইয়ুব হোসেন জানান, পুরো বছর জুড়েই একতারার ব্যবসা ভালো চলে। তবে লালনের দুই উৎসবকে কেন্দ্র করে কাজের পরিধি ও বিক্রি উভয়ই বেড়ে যায়

ছেঁউড়িয়ায় লালন একাডেমি মার্কেটের দোকানি শরীফ কুঠির শিল্প ও দোতরা ঘরের মালিক জানান, দেশের বিভিন্ন পর্যটন নগরে এসব একতারা ও লালনের কাঠের খোদাই করা প্রতিচ্ছবি বিক্রি করা হয়, যা ঢাকার ব্যবসায়ীরা পাইকারি হারে কিনে নিয়ে যান।

ছেঁউড়িয়ার চরকা নামের একতারা কারখানার মালিক বলেন, ‘এখন শ্রমিকদের মজুরি ছাড়াও সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় একতারা বিক্রি করে লাভ কম হচ্ছে। তবে সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিলে আমরা আরও বেশি উপকৃত হতে পারতাম’।

লালন ভক্ত ফকির টুনটুন বাউল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘লালনের গান আর একতারার টুংটাং সুরে ভক্ত-অনুসারীরা খুঁজে পান অমৃতের সন্ধান। ভক্তদের তৃষ্ণা মেটাতে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আশপাশে কারিগররা একতারা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এতে করে একদিকে যেমন দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষা পাচ্ছে, অন্যদিকে তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন’। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর