টাকা দেননি বলে সরকারি ঘর পাননি জাহানারা!

লক্ষ্মীপুর, দেশের খবর

হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 08:07:57

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের বাসিন্দা জাহানারা বেগম (৯০)। স্বামী-সন্তান হারিয়ে তিনি এক নাতনিকে (ছেলের মেয়ে) নিয়ে একটি কুঁড়েঘরে বসবাস করেন।

সম্প্রতি ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের একটি ঘরের জন্য জাহানারা তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও জমির খতিয়ানের ছায়াকপি জমা দেন। ঘর পাইয়ে দেওয়ার জন্য এসব চেয়ে নেন লক্ষ্মীপুর শহরের ব্রাদার্স ফার্নিচারের স্বত্ত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন। এর জন্য ওই বৃদ্ধার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকাও নেন তিনি।

পরবর্তীতে ঘর পাইয়ে দেবে বলে জাহানারা বেগমের কাছ থেকে জসিম আরও ১৫ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় সরকারি ঘরটি জসিম নিজের বাড়িতে নির্মাণ করে নেন।

এমন অভিযোগ করেছেন জাহানারা বেগম। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি কালিরচর গ্রামের মফিজ উল্যার ছেলে ব্যবসায়ী জসিম। অন্যদিকে, ঘরটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে এড়িয়ে যান টুমচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল আমিন লোলা।

জাহানারা বেগম ভেবেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে বরাদ্দ পাওয়া সরকারি ঘরে জীবনের শেষ সময় টুকু কাটিয়ে দেবেন, কিন্তু তা আর হলো না। টাকা না থাকায় ঘরটি এখন ব্যবসায়ীর দখলে।

এদিকে এমন অনিয়মের ঘটনা শোনার পর তদন্ত করে জাহানারাকে ঘর পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জন চন্দ্র পাল। ঘটনার সঙ্গে জড়িতের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

টুমচর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড কালিচর গ্রামের খোকার বাড়ির মৃত গোলাম মোস্তফার স্ত্রী জাহানারা বেগম। স্বামী হারিয়ে এক ছেলেকে নিয়ে তার সংসার ছিল। কিন্তু প্রায় ৩৫ বছর আগে ছেলেটিও মারা যায়। কিছুদিন পরই একমাত্র মেয়েকে ছেড়ে ছেলের বউ বাবার বাড়ি চলে যায়। এরপর থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে নাতনিকে বড় করে বিয়ে দেন জাহানারা। এখন নাতনি, জামাই ও তাদের সন্তানকে নিয়েই কুঁড়ে ঘরটিতে জীবনযাপন করেন তিনি। যে কোনো সময় ঘরটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সদর উপজেলা পরিষদ সূত্র জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ উদ্যোগ ‘যার জমি আছে, ঘর নেই’ আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার জন্য ২৯৬টি ঘর বরাদ্দ হয়েছে। প্রতিটি ঘরের জন্য এক লাখ করে মোট ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে সকল ঘর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সদর উপজেলায় এ প্রকল্পের তালিকায় ১৩৪ নম্বরে জাহানারা বেগমের নাম রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, টাকার বিনিময়ে স্বচ্ছল মানুষদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জসিম কয়েকটি পরিবার থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা করে নিয়ে ঘর পাইয়ে দিয়েছে। দাবি করা টাকা না দিতে পারায় জাহানারাকে ঘরটি দেওয়া হয়নি। পরে সে নিজের বাড়িতে ঘরটি নির্মাণ করে নিয়েছে।

জসিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণ করা সরকারি সেমিপাকা ঘরটি তালাবদ্ধ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নির্মাণের পর থেকে ওই ঘরে কেউ বসবাস করেনি।

অসহায় বিধবা জাহানারা বেগম বলেন, নিজের জায়গা জমি নেই। নারিকেল পাতা দিয়ে বেড়া দিয়ে কোনো রকম বসবাস করছি। যে কোনো সময় ঘরটি ভেঙে যেতে পারে। স্থানীয়দের দেওয়া সহযোগিতায় সংসার চলে। সুদের ওপর পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে জসিমকে দিয়েছি। কিন্তু আরও ১৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় সে আমাকে ঘরটি দেয়নি। সে ঘরটি তার বাড়িতে স্থাপন করেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জসিমের বাবা মফিজ উল্যাহ বলেন, ঘরটি কার নামে আমার জানা নেই। একজন মহিলা ওই ঘরে থাকেন। তার নাম হোসনেয়ারা। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পের তালিকায় এ ধরনের কোনো নাম নেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর