সূক্ষ্ম ফাঁসের জালের দখলে বঙ্গোপসাগর!

বরগুনা, দেশের খবর

ইমরান হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বরগুনা, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 05:05:41

বঙ্গোপসাগরের ৩ নদীর মোহনায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবৈধ গোপ জাল (সূক্ষ্ম ফাঁসের জাল) পেতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধরছে কিছু অসাধু জেলে।

মৎস্যজীবীরা বলছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পোনা শিকারের মহোৎসব চালাচ্ছে প্রভাবশালীরা।

আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব জালের ব্যবহার বন্ধ করতে না পারলে নষ্ট হবে সাগরের ইকো-সিস্টেম, বিলুপ্ত হবে ইলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাথরঘাটার হরিণঘাটা এলাকার হিরণ, শহিদ নাজির, এনামুলসহ প্রায় ৩২ জন লোক গোপ জাল পেতে পোনা শিকার করছে। তবে হিরণ একাই তিন নদীর মোহনার প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় গোপ জাল পেতে পোনা শিকার করছে।

জেলেদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিকেল ৫টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালীর তিন নদীর মোহনায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে খুঁটি দিয়ে গোপ নামের সূক্ষ্ম ফাঁসের জাল পেতেছে জেলেরা। তবে নদীতে জোয়ার থাকায় জালের দেখা নাই। একটু কৌশল অবলম্বন করে খানিকটা দূরে অবস্থান নিয়ে শুরু হয় অপেক্ষা। তিনঘণ্টা অপেক্ষার পর দেখা মেলে প্রায় ১০টি ট্রলারের। এরই মধ্যে পানি কমে গেছে অনেক। আর জেলেরা জাল তুলে পোনা ধরা শুরু করে। পরে ট্রলার নিয়ে কাছাকাছি আসলে বার্তা২৪.কমের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রলার ফেলে পালিয়ে যায় জেলেরা। কাছে গিয়ে দেখা যায় পোনা মাছ ভর্তি ৭টি ট্রলার। তাতে রয়েছে কয়েক হাজার কোটি মাছের পোনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জেলে বার্তা২৪.কমকে জানান, ওই ৭টি ট্রলার হচ্ছে হরিণঘাটা এলাকার হিরণ নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির। সারা বছর মোহনায় জাল পেতে পোনা ধরে শুঁটকি পল্লীতে বিক্রি করাই তার ব্যবসা। তবে হিরণের ব্যাপারে আর কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি ওই জেলেরা।

অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন হিরণ। তার কাছে পোনা শিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, গত বছর পোনা শিকার করেছেন। তবে এই নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হলে এখন আর পোনা মাছ শিকার করেন না তিনি। কেউ শত্রুতামূলক ভাবে এখন তার নামে বদনাম করছে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জেলে বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৫ টন পোনা মাছ ধরা পরছে এসব জালে।

এই বিষয়ে বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হিরণ ও শহীদ নাজিরসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর নেতৃত্বে রাতের আঁধারে মাছ ধরছে কিছু জেলে।

বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খালেদা জান্নাতী বার্তা২৪.কমকে জানান, সূক্ষ্ম ফাঁসের এসব জালে শুধু মাছের পোনা নয়, মারা পড়ছে মাছের ডিম ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী। আবার একদিকে পানিতে ভাসমান ক্ষুদ্র প্রাণী বা জীব যেভাবে নেটের জালে মারা পড়ছে, অন্যদিকে জলজ প্রাণীর খাবার উঠে যাচ্ছে ওই সব জালে। যার ফলে হুমকির মুখে পরবে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ ও জলজ প্রাণীর পরবর্তী প্রজন্ম। আর এ কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সাগরের ইকো সিস্টেম। এসব অবৈধ জাল বন্ধ না করলে চরম মূল্য দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বার্তা২৪.কমকে জানান, এসব গোপ জাল আকারে বড় হওয়ায় নির্মূল করা যাচ্ছে না। আর অনেক খরচ হওয়ায় বার বার এমন অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর