'গীতাঞ্জলি অপেরা'র কান্ডারি তকরিম খানের গল্প

কুষ্টিয়া, দেশের খবর

এমএম জামাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, কুষ্টিয়া, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 01:14:53

যাত্রাপালার এক সময়ের প্রতাপশালী খলনায়ক তকরিম উদ্দিন খান। জন্মস্থান কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের গৌড়দহ গ্রামে। তকরিম খান কুষ্টিয়া মুসলিম হাইস্কুল থেকে ১৯৬২ সালে এসএসসি পাশ করেন। এরপর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হন।

কলেজে পড়ার সময়ই কুষ্টিয়া শহরতলীর মোহিনী মিলে চাকরি করা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মহিউদ্দিনের (প্রয়াত) অনুপ্রেরণায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নাম লেখান তিনি। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে পাওয়ার টেকনোলজি বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি সম্পন্ন করে চাকরি ক্ষেত্রের অবারিত সুযোগকে কাজে না লাগিয়ে সংস্কৃতির টানে যোগ দেন যাত্রাপালা জগতে।

১৯৭২ সালে তকরিম খান, কুষ্টিয়া শহরতলী শালদহের আলাউদ্দিন ও অধ্যাপক আব্দুর রশীদ তিনজন মিলে প্রতিষ্ঠা করেন 'গীতাঞ্জলি অপেরা'। এই যাত্রাদলে তকরিম খান পরিচালক ও প্রধান খলনায়কের চরিত্রে একটানা অভিনয় করে সারাদেশে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। একযুগ সাফল্যের সাথে চলার পর যাত্রাদলটি আর্থিক অনিয়মসহ বেশকিছু কারণে বন্ধ হয়ে যায়।

সেখান থেকে ১৯৮৩-৮৫ সাল পর্যন্ত তকরিম খান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জসিম উদ্দিন ভুঁইয়ার 'বলাকা' অপেরায় পরিচালক ও খলনায়ক হিসাবে কাজ করেন। বলাকা অপেরা ছেড়ে একই পদে কুষ্টিয়ার মোহাম্মদ আজাদের 'দি গীতাঞ্জলি' অপেরায় যোগ দেন। ১৯৮৮/৮৯ সালে তকরিম খান নিজ মালিকানা স্বত্ব নিয়ে আবারও গীতাঞ্জলি অপেরা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

কিন্তু অপসংস্কৃতি আগ্রাসনে এক বছর চলার পর গীতাঞ্জলি অপেরাও বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ২৫ বছর যাত্রাপালার সাথে যুক্ত দাপুটে অভিনেতা তকরিম উদ্দিন খান অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে নাচমহল ছবিতে দবির খা, কে দেবে জবাব ছবিতে আলী শাহ, কোহিনুর ছবিতে গোলাম কাদের, রক্ত দিয়ে কিনলাম ছবিতে মাসুদ খান চরিত্রে তকরিম খানের অনবদ্য অভিনয় আজও সেই সময়ের যাত্রাপালার দর্শকদের মনকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেন তিনি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম থাকলেও ভাতার তালিকায় এখনো নাম ওঠেনি তকরিম খানের। একই সাথে ১৯৭৩ সালে পৈত্রিক জমিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গৌড়দহ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করে ২০০৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। ১৯৯২ সালে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের মিরপুর উপজেলাস্থ মশান বাজারের অনতিদূরে প্রতিষ্ঠিত বলিদাপাড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও এই তকরিম উদ্দিন খান।

মিরপুর উপজেলার মশানে দিশা কমপ্লেক্স চত্বরে জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনেও দিশার সহযোগিতায় সপ্তাহব্যাপী যাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সম্প্রতি বার্তা২৪.কমের সাথে কথা তকরিম খানের। তিনি বলেন, 'আমার জীবনের অনেক সময় কেটে গেছে এই যাত্রাপালার পেছনে। এখন বয়স হয়েছে। আর পেরে উঠি না। তবুও এই যাত্রা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর