ঝুঁকি নিয়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করছেন পর্যটকরা

কক্সবাজার, দেশের খবর

নুরুল হক, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, টেকনাফ, বার্তা ২৪.কম | 2023-09-01 10:22:54

ঝুঁকি নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ করতে হচ্ছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। নাফনদীর মোহনা ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে যেতে হবে এই দ্বীপে। কিন্তু যাওয়ার পথে চর ও ডুবোচর জেগে উঠায় প্রতিনিয়ত আটকা পড়ছে জাহাজ। এতে চরম দুর্ভোগের পাশাপাশি বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, মৌসুমের প্রতিদিন পর্যটকবাহী সাতটি জাহাজ হাজার হাজার পর্যটক নিয়ে সেন্টমাটিন যাতায়াত করে। এছাড়া স্পিড বোট ও কাঠের ট্রলারে করেও যাতায়াত করে পর্যটকরা। এ সব নৌ-যানগুলোকে মিয়ানমার কূল ঘেঁষে পর্যটকদের নিয়ে ঝুঁকিতে সেন্টমাটিন যাতায়াত করতে হয়।

নাফনদীর এপার-ওপার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত। দুদেশের পাহাড়ি ঢলে পলি মাটি নদ ও সাগরের তলদেশে পানির স্রোত বদলে নাব্যতা হ্রাস পেয়ে ছোট-বড় চর ও ডুবোচর জেগে উঠেছে। এছাড়া মাঝপথে জেগে উঠছে আরও কয়েকটি চর।

পর্যটকদের সুবিধার্থে এখনো নির্মিত হয়নি পরিকল্পিত নৌ-রুট। অন্যদিকে দমদমিয়া জাহাজ ঘাটে এখনো লঞ্চ টার্মিনাল ও জেটি নির্মিত না হওয়ায় কাঠের জেটি দিয়ে জাহাজ ওঠানামা করতে হয় সবাইকে। যে কারণে পর্যটকদেরভারে যেকোন সময় কাঠের জেটি ভেঙে বড় দুর্ঘটনারও শঙ্কা রয়েছে। পর্যটন মৌসুমকে ঘিরে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করছেন।

এসব জাহাজ হলো, কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ, এমভি গ্রিন লাইন-১, বে ক্রুজ, এমভি আটলান্টিক ক্রুস, এলসিটি কাজল, এফ বি ফারহান। এছাড়া একাধিক স্পিড বোট, কাঠের ট্রলার এবং কয়েক’শ ফিশিং ট্রলার সাগরে মাছ আহরণে যায়। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমারে যাতায়াত, সীমান্ত বাণিজ্যিক পণ্য ও গবাদি পশুর জন্য এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল। এ চ্যানেলে পর্যটক জাহাজ, যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রলার, বাণিজ্যিক পণ্য ও গবাদি পশু এবং ফিশিং ট্রলারের ঝুঁকি লেগে থাকে। এর ফলে বাণিজ্য পণ্য, মাছ আহরণ ও পণ্যবাহী নৌ-যানে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন যেতে টেকনাফ নৌ-রুটের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। এ রুটে চর ও ডুবোচর জেগে ওঠায় মিয়ানমার কূল ঘেঁষে নৌ-যানগুলো মারাত্মক ঝুঁকিতে চলাচল করছে। তবে ড্রেসিং এর অভাবে চর ও ডুবোচরের আয়তন দিন দিন বাড়ছে। নাফনদ ও বঙ্গোপসাগর এলাকায় কোন বয়া না থাকায় নৌ-যান চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রমেও দেখা দিতে পারে প্রতিবন্ধকতা।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আসা ঢাকার মোকারম জানান, অপরূপ সৌন্দর্যের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে এসে দমদমিয়া কাঠের জেটি ও সেন্টমাটিন জেটি দিয়ে জাহাজে উঠা নামা বিপদজনক। এ সব জেটি যে কোন সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তবে সেখানে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টোল। পাশাপাশি পর্যটন শিল্প বিকাশে লঞ্চ টার্মিনালসহ নৌ-রুটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।

ঢাকা থেকে আসা নিহাদ আল আমিন জানান, ডুবোচরে আটকা পড়ছে জাহাজ। এতগুলো ডুবোচর দেখেও কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ডুবোচরে আটকে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

টেকনাফ স্থল বন্দরের ব্যবসায়ী মীর কামরুজ্জামান বার্তা ২৪.কমকে জানান, একযুগ ধরে সীমান্ত ব্যবসা- বাণিজ্য করছি। সাগরে ডুবোচরের কারণে ট্রলার পরিবহনে সমস্যা বাড়ছে। গত কয়েক বছরে সেন্টমাটিন হয়ে টেকনাফ বন্দরে আসার পথে কাঠ বোঝাই ট্রলার ডুবোচরে বিলিন হয়ে যায়। চর ও ডুবোচরের কারণে মিয়ানমার জলসীমানা দিয়ে যাতায়ত করতে হয়। এভাবে নব্যতা সংকট লেগে থাকলে নেমে আসবে অন্ধকার। এ চর ও ডুবোচরগুলো ড্রেসিং জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মনির হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘টেকনাফ-সেন্টমাটিন নৌ রুটে পর্যটক নিয়ে জাহাজ চলাচল করছি। নাফনদের শাহপরীরদ্বীপ বদর মোকাম থেকে সেন্টমাটিন পর্যন্ত কয়েকটি ডুবোচরের কারণে নব্যতা হ্রাস পেয়েছে। এমনকি কিছু কিছু সময় ডুবোচর এলাকায় জাহাজ পার করা কষ্ট হয়ে পড়ে। অতি সাবধানে ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে জাহাজ চালিয়ে নিতে হয়। ডুবোচরে আটকে গেলে বিপদ ডেকে আনতে পারে। এ সব ডুবোচর এলাকায় কোন ধরনের বয়া বা সংকেতের চিহ্ন নেই। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নৌ রুটে দৃষ্টি না দিলে, যে কোন সময় সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা হতে পারে।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ সেলিম বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘সেন্টমাটিন নৌ-রুটের ডুবোচর এলাকায় মিয়ানমারের সীমানা হওয়ায় বয়া স্থাপনে সমস্যা হচ্ছে। এর ফলে ওই সীমানায় জাহাজ যেতে পারছেনা। তবে ডুবোচর এলাকায় বাঁশের চিহ্ন দিয়ে সংকেত দেওয়া হয়েছে। ডুবোচর এলাকা জলসীমা হওয়ায় বয়া স্থাপনের বিষয়টি মিয়ানমারকে অবগত এবং চর এলাকাটি ড্রেসিং করতে উচ্চ পর্যায়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে ডুবোচর এলাকায় প্লাস্টিক বয়া স্থাপনে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নাফনদ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত পাঁচটি স্থানে প্লাস্টিক বয়া বসানো হবে। তবে পর্যটকদের সুবিধার্থে টেকনাফ দমদমিয়ায় ঘাটে একটি কাঠের জেটি স্থাপন করা হয়েছে। সেন্টমাটিনেও একটি কাঠের জেটি করা হবে। তবে পরামর্শ প্রতিষ্ঠান বুয়েট টেকনাফ ও সেন্টমাটিনে দুইটি আরসিসি জেটি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে তা কার্যক্রম চলছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর