রাস্তার দুই পাশে পুরো শহরের আবর্জনা, উদাসীন কর্তৃপক্ষ

হবিগঞ্জ, দেশের খবর

কাজল সরকার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, হবিগঞ্জ, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 15:56:41

হবিগঞ্জের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, জেলা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, কিবরিয়া অডিটরিয়াম ও আনসার ভিডিবি ক্যাম্প। এছাড়া পশ্চিমে রয়েছে জেলা আধুনিক স্টেডিয়াম। এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মাঝে বাইপাস সড়কের দু’পাশে ফেলা হচ্ছে পুরো শহরের ময়লা-আবর্জনা। আর্বজনার স্তূপ আর দুর্গন্ধে ওই এলাকা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। আবার এর পাশেই নিউ ফিল্ড মাঠে বসেছে মাসব্যাপী কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য মেলা।

জানা গেছে, প্রায় দেড় লাখ মানুষ অধ্যুষিত ৯ বর্গ কিলোমিটারের শহরে গৃহস্থালি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, হাসপাতাল-ক্লিনিক, শিল্প-করখানা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ইত্যাদিতে প্রতিদিন ব্যাপক পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এসব ময়লা শহরের বিভিন্ন ডাস্টবিন থেকে এনে পৌরসভার ট্রাক ও ভ্যানে করে জেলা আধুনিক স্টেডিয়াম এলাকার বাইপাস সড়কের দু’পাশে ফেলা হচ্ছে। এতে শহরবাসীর সমস্যা ও পরিবেশ দূষণ হলেও কোনো নজরদারি ও উদ্যোগ নেই হবিগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষের।
ময়লা ফেলার স্থান শহরের বাইরে স্থানান্তরিত কারার আশ্বাসেই কেটে গেলো পাঁচ বছর। অথচ স্থানান্তরের পরিবর্তে দিন দিন ময়লা-আবর্জনার স্তূপ বেড়েই চলেছে ওই এলাকায়।

এদিকে মাঝে মধ্যে ওই ময়লার স্তূপে আগুন দিয়ে পোড়ানোর চেষ্টা করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এতে আগুনের ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে ওঠে। দরজা জানালা বন্ধ করে রাখতে হয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীকে। এতে একদিকে যেমন এলাকাবসীর বিভিন্ন রোগবালাই ছড়িয়ে পড়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে মশার উপদ্রবও। সব কিছু মিলিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই স্থানীয় ভুক্তভোগীদের।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্টেডিয়াম সংলগ্ন এ সড়কের পাশে জেলা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, কিবরিয়া মিলনায়তন, আনসার কার্যালয় ও হোস্টেল এবং সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন। ফলে প্রতিদিন তাদের ময়লার ভাগাড় পেরিয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয়। সন্ধ্যা হলেই দরজা-জানালা বন্ধ করে দিতে হয়। না হলে মশার যন্ত্রণায় রাতে ঘুমানো দায় হয়ে পড়ে।

অপরদিকে সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে বাইপাস সড়ক সংলগ্ন নিউ ফিল্ড মাঠে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। ময়লার দুর্গন্ধে মেলায় আসা দর্শনার্থীদেরকেও দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে দাবি মেলা চেম্বার নেতাদের।

এ ব্যাপারে প্রতিদিন স্টেডিয়ামে খেলতে আসা মো. ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ‘হবিগঞ্জ শহরে নির্মিত আধুনিক স্টেডিয়ামটি ঘিরে তৈরি হয়েছে জেলার ক্রীড়াঙ্গণের এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। এখানে বিভিন্ন আন্তঃজেলা টুর্নামেন্টসহ জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অথচ এই স্টেডিয়ামে প্রবেশ মুখে ময়লার স্তূপ। এছাড়া এর দুর্গন্ধ স্টেডিয়ামের ভেতর পর্যন্ত পৌঁছায়।’

বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ¯স্নাতক (সম্মান) ৩য় বর্ষের ছাত্র তারভীর আহমেদ বলেন, ‘জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ এই কলেজের পাশে ময়লা আবর্জনার স্তূপ মেনে নেওয়া যায় না। এর দুর্গন্ধ কলেজ পর্যন্ত পৌঁছায়। এতে আমাদের লেখা-পাড়ার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘বাপা’র পক্ষ থেকে বার বার অনুরোধ করা হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করেনি। নিয়মিত তারা ওই স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্বারক লিপিও দিয়েছি।’

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র দীলিপ দাস বলেন, ‘প্রতিদিন শহরের বর্জ্য অপসারণ করতে হয়। কিন্তু ডাম্পিং স্পট না থাকায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পৌরসভার ময়লা ফেলার নিজস্ব জায়গা বানিয়াচঙ্গের আতুকুড়া এলাকায় জায়গা কিনা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ময়লা ফেলার ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজনের বাধায় বাধ্য হয়ে বাইপাস সড়কের দু’পাশে রাখতে হচ্ছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর