‘ঐ মামু, মুই আজান দিবা গেনু’

ঠাকুরগাঁও, দেশের খবর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঠাকুরগাঁও, বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 01:15:39

নাম বাদশা। বয়স ১০ বছর। একজন মানসিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। এরপরও থেমে নেই তার চেষ্টা। হতে চায় মসজিদের ইমাম। আজান দিতে ভাল লাগে তার। প্রতিদিনই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান দেওয়ার অপেক্ষায় থাকে এই শিশুটি।

শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ টায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চুনিহাড়ি এলাকায় একতা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন স্কুল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে গেলে দেখা যায় মসজিদের বারান্দায় বসে আছে শিশু বাদশা। এরপর ঠিক সাড়ে ১২টায় পাশের একটি মসজিদের যোহরের আজান শোনা মাত্র স্কুলের পরিচালককে লাফিয়ে বলে ওঠে ,‘ঐ মামু, মুই আজান দিবা গেনু।,

শুদ্ধ করে কথা বলতে না পারা শিশুটির আজান শুনে মনটি যেন মুগ্ধ হয়ে উঠল। শিশু বাদশার বাড়ি আরাজী ঝাড়গাঁও গ্রামে। সে ঐ গ্রামের কালু মোহাম্মদের ছেলে।

নামায শেষে শিশু বাদশার সঙ্গে বার্তা২৪.কমের কথা। এ সময় সে বললো, ‘প্রতিদিন পড়াশুনার পাশাপাশি আযান দেই আমি। এটা আমার ভাল লাগে। আমি মসজিদের ইমাম হতে চাই। আমার কথা বলতে কষ্ট হয়। এরপরও আমাদের এই স্কুলের সকলে আমার অনেক যন্ত নেয়। এখানকার শিক্ষকরা অনেক ভাল।’

স্কুলের তথ্য মতে, চার বছর বয়স থেকেই বাদশাকে তার পরিবার একতা প্রতিবন্ধী স্কুলে এসে ভর্তি করে। এরপর থেকেই স্কুলের শিক্ষকদের চেষ্টায় আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে থাকে তার অবস্থার। বর্তমানে বাদশা সেই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। সে স্কুলের নিজস্ব আবাসিকে থাকে।

বাদশার বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাদশা তো ভাল করে কথা বলতে পারে না। অনেক কষ্ট হয় তার। এরপরও তার কণ্ঠে প্রতিদিন আজান শুনতে ভাল লাগে। কণ্ঠটি শুনে যেন মনটা মুদ্ধ হয়ে ওঠে। তার যদি চিকিৎসার জন্য কোনো একটা ব্যবস্থা করা যায় তাহলে অনেক ভাল হতো।’

বাদশার বাবা কালু মোহাম্মদ বলেন, ‘জন্মের পর থেইে আমাদের বাদশা মানসিক সমস্যায় ভোগে। অনেক চিন্তিত ছিলাম যে কি হবে আমাদের এই আদরের সন্তানের। এরপর অনেকের মুখেই শুনেছি একতা প্রতিবন্ধী স্কুলে নাকি প্রতিবন্ধী শিশুদের পড়াশোনা করানো হয়। অবশেষে বাদশার ৪ বছর বয়সে তাকে সেই স্কুলে ভর্তি করাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি বাচ্চটাকে চিকিৎসা করার। যেখানে ভাত খাওয়ারই টাকা নাই, সেখানে চিকিৎসা আর কি করব।’

একতা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন স্কুল ও পুনর্বাসন কেন্দের পরিচালক আমিরুল ইসলাম বার্তা২৪কে বলেন, ‘যখন এই বাচ্চাটি আমাদের এখানে আসে তখন তার অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। আমাদের এখানে মোট ৪৫০ জন প্রতিবন্ধী বাচ্চা রয়েছে। আমরা এখানে এই ধরনের বাাচ্চাদের বাংলা-ইংরেজিসহ কোরআন বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে থাকি। তাদের পাশাপাশি আমরা এই বাদশার দেখাশোনা পড়াশোনা সব করাচ্ছি বিনা পয়সায়। আমরা চেষ্টা করি সমাজের এই অবহেলিত প্রতিবন্ধী মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর। সেই সাথে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব বাচ্চাদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর