বিরল রোগে আক্রান্ত একই পরিবারের ৫ জন

মাদারীপুর, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, গোপালগঞ্জ, বার্তা২৪ | 2023-09-01 10:36:20

 

মাদারিপুরের রাজৈর উপজেলার রাজ্জাক শেখের পরিবারের ৫ জন এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসায় জমিজমা সর্বস্ব হারালেও যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয়েছে এক বোন ও ২ মেয়ের। বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে বেঁচে থাকা ১৪ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে আব্বাস ও বড় মেয়ে সারমিনকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে অসহায় রাজ্জাক শেখের।

জানা যায়, জন্মের পর থেকেই পরিবারের ৩ মেয়ে, এক ছেলে এবং বোন বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগতে থাকেন। জন্মের পর মেয়ে মরিয়ম আড়াই বছর বয়সে, ১৮ বছর বয়সে আদুরি আক্তার এবং ৪৫ বছর বয়সে বোন এসমেতারার মৃত্যু হয়। আব্বাসের রোগের বিষয়ে গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জানতে পেরে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মকর্তারা চিকিৎসায় সাহায্য করলেও কোন সুরাহা হয়নি। একমাত্র ছেলে আব্বাস ও বড় মেয়ে সারমিনের চিকিৎসায় সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব রাজৈর উপজেলার আলমদস্তা গ্রামের রং মিস্ত্রী রাজ্জাক শেখ ।

আব্বাস বলেন, ‘জন্মের পর আমার ডানপায়ে একটা আঁচিল হয়েছিল। বয়সের সাথে সাথে ডান পা অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে এবং শরীরজুড়ে আঁচিলে ভরে যায় । আমি ছোট বেলায় স্কুলে যেতাম।কিন্তু ৩য় শ্রেণির পর আমার অবস্থা দেখে বন্ধুদের অবহেলার কারণে আর স্কুলে যাইনি। আমি সবার মত স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই।

আব্বাসের বাবা রাজ্জাক শেখ জানান, ছেলেমেয়ের পিছনে জমি বিক্রি করে অনেক টাকা খরচ করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার। বোন আর ২ মেয়েতো মারাই গিয়েছে। টাকার অভাবে বেঁচে থাকা ছেলে আর বড় মেয়ের চিকিৎসা করাতে না পেরে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। যদি সরকার আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করেন তাহলে ছেলেমেয়ের চিকিৎসা করাতে পারবো ।

ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা সুব্রত মণ্ডল জানান, গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আব্বাসের রোগের বিষয় জানতে পেরে হাসপাতালের প্রিন্সিপাল ও স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের মহাসচিব এমএ আজিজ স্যারকে জানাই। পরে তিনি বিনাখরচে আব্বাসের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। ২০১৮ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আব্বাসকে উক্ত হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক ড. একেএম রুহুল, ড. এমএ বাকি এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সাব্রিনা ইয়াসমিনের অধীনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক ইউনিট এবং সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তাররা এই রোগকে ওয়াইল্ড সিমটম রোগ হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের ৩য় রোগী আব্বাস শেখ । অবশেষে আব্বাসের পা সার্জারি করাতে চাইলে মুক্তা মনির অবস্থা দেখে বাবা রাজ্জাক শেখ অপারেশন করাতে রাজি হননি। দেড় মাস চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলে রাজ্জাক শেখ ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে যান।

রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার মণ্ডল বার্তা২৪ কে বলেন, আমি আব্বাস শেখের জটিল রোগে আক্রান্তের বিষয়টি জেনেছি। এটাকে আসলে এলিফেন্টিয়াসিস রোগ বলা হয়। তার পা দেখতে অনেকটা হাতির পায়ের মতো। এটি জটিল রোগ হলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বড় হাসপাতালে বিশেষ ধরনের অপারেশন ও ওষুধের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা সম্ভব।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর