ব্লাস্ট গবেষণায় যুগান্তকারী উদ্ভাবনীর অপেক্ষায়

মেহেরপুর, দেশের খবর

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মেহেরপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 23:19:01

গমের ব্লাস্ট নামক ছত্রাক প্রতিরোধে মেহেরপুর জেলায় চলছে সরেজমিন গবেষণা। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে ব্লাস্টের কারণ উদ্ভাবন, প্রতিরোধ পদ্ধতি ও প্রতিরোধী একাধিক জাত উদ্ভাবনের গবেষণা শুরু হয়েছে। গবেষণা সফল হলে এক যুগান্তকারী উদ্ভাবনী দুয়ার খুলে যাবে, প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে ব্লাস্ট ছত্রাককে।

জানা গেছে, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে গমের ব্লাস্ট রোগ দমনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা) ও মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) যৌথভাবে মেহেরপুরে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব (প্ল্যান্ট প্যাথলজি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বাহাদুর মিয়ার তত্ত্বাবধানে ১২ জন এমএস শিক্ষার্থী এ বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সদর উপজেলার নতুন মদনাডাঙ্গা গ্রামে রেজাউল হকের দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আখতারুজ্জামান জানান, গমের ব্লাস্ট একটি ক্ষতিকর ছত্রাকজনিত রোগ। ছত্রাকটির বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনাপরথি অরাইজি (পাইরিকুলারিয়া অরাইজি) প্যাথোটাইপ ট্রিটিকাম। গমের শীষ বের হওয়া থেকে ফুল ফোটার সময়ে তুলনামূলক উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া থাকলে এ রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। রোগটি ১৯৮৫ সালে সর্ব প্রথম  ব্রাজিলে দেখা যায়।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে মেহেরপুর জেলায় সর্বপ্রথম গমে ব্লাস্ট দেখা দেয়। এ রোগের কারণে আক্রান্ত গমের ফলন শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কমে যায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে ক্ষেতের ফসল প্রায় সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়। বিএডিসি খামারসহ চাষী পর্যায়ে আবাদকৃত অনেক গম পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও গবেষণা টিমের সদস্যদের কাছে থেকে জানা গেছে, গমে ব্লাস্ট আক্রমণের পর থেকে এটা নিয়ে দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীরা ব্লাস্ট আক্রান্ত এলাকাসমূহ পরিদর্শন করে এটাকে নির্মূলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত হিসেবে গত বছর বারি গম-৩৩ নামের একটি জাত অবমুক্ত হয়েছে। যা এ বছরও পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বারি গম-৩৩ জাতের সফলতার পাশাপাশি ব্লাস্ট প্রতিরোধী আরো জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।

এদিকে বাংলাদেশে গমের ব্লাস্ট রোগ দমনের জন্য মেক্সিকোতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনষ্টিটিউট  বাংলাদেশের গম বিজ্ঞানীদের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। গবেষণা প্লটে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১১টি পরীক্ষা পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে গবেষণায় ৭টি কার্যকরী পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে যে পদ্ধতিটি ব্লাস্ট প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে সেটি গবেষণার চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে ধরা হবে।

আগামী দুই মাসের মধ্যে এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন গবেষক দল। কার্যকরী পদ্ধতিগুলো হচ্ছে- ছত্রাক নাশকের কার্যকারিতার পরীক্ষা, মাটিতে সার প্রয়োগ, পাতায় সার প্রয়োগ, বীজবাহিতের পরীক্ষা, বিভিন্ন জাতের গমে ব্লাস্ট প্রতিরোধী পরীক্ষা, মিউটেশন পরীক্ষা, মসুরের সাথে শস্য পর্যায় অবলম্বন। এছাড়া আরো চার ধরণের পদ্ধতি গবেষণা পরীক্ষণ হিসেবে চালানো হচ্ছে।

গবেষণা দলের সদস্যরা জানান, গমের ছত্রাকজনিত রোগ ব্লাস্ট রোগের কারণ উদঘাটনসহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। এর জন্য আরো দুই মাস সময় লাগবে। আশা করছেন তারা একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন করতে সক্ষম হবেন।

অধ্যাপক বাহাদুর মিয়া বলেন, ‘ব্লাস্ট গম চাষের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক বছর ধরে ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের জাত উদ্ভাবনের গবেষণা চালাচ্ছি। আরো দুই বছর সময় লাগতে পারে। এই গবেষণাটি বাংলাদেশেই প্রথম হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘তবে বালাই নাশক ব্লাস্ট আক্রান্ত হওয়ার আগে স্প্রে করলে প্রতিরোধ হতে পারে। এছাড়া প্রোভেক্স নামক এক ধরণের ওষুধ দিয়ে বীজ শোধন করে (প্রতিকেজি বীজে ৩ গ্রাম) বপন করলে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। প্রতিরোধী আরো কয়েকটি জাত উদ্ভাবন না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী সমাধান হবে না।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর